ঢাকা, শনিবার, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

চিড়িয়াখানায় স্বস্তি ফিরিয়েছে ময়ূরী-ঈগল

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
চিড়িয়াখানায় স্বস্তি ফিরিয়েছে ময়ূরী-ঈগল ছবি: জি এম মুজিবুর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: কয়েকদিন আগের ঘটনা। চিড়িয়াখানা ঘুরে তিন দর্শনার্থী ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত।

কিছু একটা খাওয়ার জন্য পযর্টন করপোরেশনের রেস্তোরাঁ ঈগল’র সামনে গিয়ে পাঁয়চারি করছেন। কিন্তু ভেতরে ঢোকার সাহস পাচ্ছেন না।
 
দৃশ্যটি চোখে পড়ে ঈগল রেস্তোরাঁর পরিবেশক ইকবাল হোসেন মজুমদারের। এগিয়ে গিয়ে তিনি বিনয়ের সঙ্গে জিজ্ঞেস করেন, আপনারা কিছু খাবেন? জবাবে ওই তিন দর্শনার্থী বলেন, খাবো তো। কিন্তু আপনারা তো গলা কেটে রেখে দেবেন!
 
চিড়িয়াখানায় খাবারের মাত্রাতিরিক্ত দাম নিয়ে এই পূর্ব ধারণা দূর করতে ঈগল রেস্তোরাঁর পরিবেশক ইকবাল হোসেন মজুমদার ওই তিন দর্শনার্থীকে ডেকে নিয়ে খাবার টেবিলে বসান এবং খাবারের মূল্য তালিকা এনে দেখান।
 
সঙ্গে এটাও বলেন, খাবারের দাম যেটা লেখা আছে, এটাই আপনাদের কাছ থেকে নেওয়া হবে। এবার আপনারা সিদ্ধান্ত নিন খাবেন কী-না? অতঃপর মূল্য তালিকা দেখে খাবারের অর্ডার দেন ওই তিন দর্শনার্থী।
 
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) দুপুর ১২টা। চিড়িয়াখানায় পযর্টন করপোরেশনের ময়ূরী রেস্তোরাঁয় খাওয়া শেষে মুখ ভার করে বসে আছেন পলাশ পাল ও শ্রীকৃষ্ণ পাল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা দুই দর্শনার্থীর মন খারাপ এই কারণে যে, দেড় লিটারের একটি পানির বোতলের দাম তাদের কাছ থেকে রেখেছে ৪০ টাকা! অর্থাৎ গায়ের মূল্যের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি!
 
বিষয়টি নিয়ে ময়ূরী রেস্তোরাঁর সহকারী ব্যবস্থাপক মো. আলীর মুখোমুখি হলে তিনি জিহ্বায় কামড় দিলেন! এমনটি হওয়ার কথা নয়। কেন হলো, কীভাবে হলো?


 
ডাকা হলো পরিবেশনকারীকে। পরে জানা গেলো, বার্গার আর পানির বিল করতে গিয়ে ভুলবশত বার্গার আর জুসের বিল করে ফেলেছেন খাবার পরিবেশনকারী। অতঃপর পলাশ পাল ও শ্রীকৃষ্ণ পালকে ফেরত দেওয়া হলো বাড়তি টাকা।
 
পরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন পলাশ পাল ও শ্রীকৃঞ্চ পাল। তারা বলেন, যে চিকেন বার্গার বাইরের ফাস্টফুডের দোকানে ৮০ থেকে ১২০ টাকা, সেই মাপের বার্গারই চিড়িয়াখানার ময়ূরী রেস্তোরাঁয় পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৬০ টাকায়! অন্য খাদ্যপণ্যগুলোর দামও বাজার মূল্যের সমান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক কম!
 
ময়ূরী ও ঈগল রেস্তোরাঁর সামনে টাঙানো খাদ্য তালিকায় দেখা যায় কফি-২০ টাকা, ফ্রাইড চিকেন-৩০ টাকা, সিঙ্গাড়া ১০ টাকা, ভেজিটেবল সমুচা ২৫ টাকা, পরাটা ১৫ টাকা, ভেজিটেবল স্প্রিং রোল ২০ টাকা, চিকেন সচেজ ২৫ টাকা, মিট রোল ৫০ টাকা, প্লেইন কেক ৩০ টাকা, ফ্রুট কেক ৩৫ টাকা, ফ্রেন্স ফ্রাই ৩০ টাকা, চিকেন শাসলিক ৬০ টাকা, ফ্রেশ জুস ৬০ টাকা!
 
চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের মতে, খাবারের এই দাম ঢাকা শহরের যে কোনো সাধারণ হোটেল-রেস্তোরাঁর চেয়ে কম। আর দামি হোটেল রেস্তোরাঁর তুলনায় অর্ধেক!
 
তবে কোমল পানীয়, বোতলজাত জুস ও পানির মূল্য কিছুটা বেশি। অন্তত গায়ের মূল্যের চেয়ে ৩ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত!


 
এই বেশি দামে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে ময়ূরী রেস্তোরাঁর সহকারী ব্যবস্থাপক মোহম্মদ আলী বাংলানিউজকে জানান, তারা বাজার থেকে যা কিছু কেনেন, তার উপর ৫ শতাংশ ভ্যাট, বিক্রির উপরে ১৫ শতাংশ এবং সার্ভিস চার্জ ১০ শতাংশ দিতে হয়। ১শ’ টাকার পণ্য তাদের বিক্রি করতে হয় ১ শ’ ৩০ টাকা। আর এই দাম মন্ত্রণালয় থেকেই ঠিক করে দেওয়া।
 
কিন্তু যে খাবার তারা নিজেরা তৈরি করেন সেগুলো সূলভ মূল্যেই বিক্রি করা হয়। মন্ত্রণালয় যদি ক্রয়-বিক্রয়ের ভ্যাট কমাতে পারে এবং সার্ভিস চার্জের একটা অংশ সাবসিডি দিতে পারে তাহলে আরও কম দামে দর্শনার্থীদের কাছে খাবার বিক্রি সম্ভব- জানান মোহম্মদ আলী।
 
রোজার ঈদের আগের দিন চিড়িয়াখানায় চালু হওয়া ময়ূরী ও ঈগল রেস্তোরাঁ নিয়ে স্বস্তির কথা জানান ভোলার মনপুরা থেকে পরিবারসহ ঘুরতে আসা ইলিশ ব্যবসায়ী বাদশাহ মিয়া।  

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গলাকাটা দামের ভয়ে চিড়িয়াখানায় এসে কিছু মুখে দিতাম না। আজ পরিবারসহ কফি খেলাম। মাত্র ২০ টাকা কাপ! অন্য খাবারের দামও সস্তা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
এজেড/এএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।