ময়মনসিংহ: বিট পুলিশিং ও উঠান বৈঠক। ময়মনসিংহ নগরীর বাসিন্দাদের কাছে বিষয়টি নতুন মনে হলেও আদতে অনেক আগে থেকেই পুলিশিং ব্যবস্থায় চালু রয়েছে ‘জনবান্ধব’ এ কর্মসূচি।
এ মডেলকে সামনে নিয়েই পুলিশের সেবাকে মানুষের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে দিতে কমিউনিটি পুলিশিং’র আওতায় ময়মনসিংহেও বিট পুলিশিং ও উঠান বৈঠক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে জেলা পুলিশ।
পুলিশকে মানুষের আরো কাছে নিয়ে যেতে নগরীর বিভিন্ন এলাকাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে একেকজন বিট অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। প্রতি এলাকায় থাকবে একাধিক বিট।
ওই এলাকার জনসাধারণ যেন সহজেই পুলিশি সহায়তা পেতে পারেন এ কারণে প্রতি বিট কর্মকর্তার সুনির্দিষ্ট মোবাইল নম্বরও দেওয়া হবে। এতে করে প্রতি এলাকার মানুষের সঙ্গে পুলিশের সামাজিকবন্ধন বেশ সুদৃঢ় ও মজবুত হবে।
বিট পুলিশিং’র আওতায় নগরীর পাড়া-মহল্লায় নিয়মিতই উঠান বৈঠকের মাধ্যমে অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে সফলতা আসবে বলে মনে করেন ময়মনসিংহের নতুন পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
তার ভাষ্যে, বিট পুলিশিং ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে পুলিশ স্থানীয় এলাকার বাসিন্দাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হবে। নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
গত বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে বাংলানিউজের কাছে ময়মনসিংহকে নিয়ে জনসম্পৃক্ত এমন কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন পুলিশের ২০তম ব্যাচের এ কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (ডিএমপি) কাজ করেছেন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
সেই অভিজ্ঞতা থেকেই কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমের আওতায় ময়মনসিংহেও পুলিশের এ দু’টি পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
‘সাধারণ মানুষের মধ্যে অবস্থান করে তাদের জন্য কাজ করে পুলিশ’ এমনটি জানিয়ে সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘জনবান্ধব পুলিশিং’র দিকে আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে আমাদের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করছি।
আগামী মাস থেকে জেলার প্রতিটি থানায় কমিউনিটি পুলিশের সভা করা হবে। ওইসব সভায় বিট পুলিশিং ও উঠান বৈঠকের বিষয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে আলোচনা হবে, জানান এসপি নুরুল ইসলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স, মাস্টার্স এবং পপুলেশন সায়েন্স থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করা সৈয়দ নুরুল ইসলাম ২০০১ সালে বিসিএসে উত্তীর্ণ হন। ওই সময়েই সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগদান করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এ বাসিন্দা।
প্রায় আড়াই মাস আগে ময়মনসিংহে যোগদান করা এ পুলিশ কর্মকর্তা চাকরি জীবনে দীর্ঘদিন রমনা ডিভিশনের এডিসি এবং ডিসি, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার, সিটিএসবি’র এসএস (পলিটিকক্যাল), ওয়ারি ডিভিশনের ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জঙ্গিবাদ নির্মূল, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এবং জনহয়রানির বিষয়ে নিজের আপোসহীন অবস্থার কথাও জানান সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এসব বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের আন্তরিক হতে বলেছি। এ নিয়ে কোনো রকম তথ্য গোপন, ডিপ্লোমেসি বরদাস্ত করবো না।
ঈদ, জন্মাষ্টমী, দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে পুলিশ সুচারুরূপে দায়িত্ব পালন করেছে। ফলে এ সময়টাতে কোনো অঘটন ঘটেনি। অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে আমরা তৎপর রয়েছি বলেন তিনি।
পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশে ওয়ারেন্ট তামিলেও ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ নতুন যুগের সূচনা করেছে।
এক্ষেত্রে নিজের কাজের কৌশল তুলে ধরে এসপি বলেন, একেক থানায় এক থেকে দুই প্লাটুন পুলিশ ১০ থেকে ১২টি টিমে ভাগ হয়ে রাতভর অভিযান চালিয়ে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেফতার করছে।
ময়মনসিংহে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না, এ মন্ত্র নিয়েই পুলিশ কাজ করছে, যোগ করেন পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
এমএএএম/জেডএস