ঢাকা: সরকারি এবং বেসরকারকারি সংস্থার মাধ্যমে নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।
একই সঙ্গে তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ কারার উপায় বের করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পার্লামেন্ট নিয়ে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় চলমান ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৫ তম অ্যাসেম্বলির সাধারণ আলোচনা পর্বে ‘Human Rights abuses as precursors of conflict: Parliaments as early responders’ এর ওপর সাধারণ আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধি দলের নেতা মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।
বুধবার (২৬ অক্টোবর) জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকারের কার্যালয় থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
ডেপুটি স্পিকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ যেকোন ধরনের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মানবতা বিরোধী অপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিপক্ষে অবস্থান করে এবং এসব সমস্যা মোকাবেলায় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পারস্পরিক সহযোগিতায় বিশ্বাস করে। গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরেধী অপরাধ প্রতিরোধ করা রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্ব বলেও বাংলাদেশ বিশ্বাস করে। সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী।
এ সময় সম্মেলনে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিক, অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আব্দুল মতিন খসরু, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, রেল মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীসহ প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ডেপুটি স্পিকার বলেন, পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যার জন্মই হয়েছে শোষণ, নিপীড়ন, নিষ্ঠুর আচরণ ও ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম করে।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় সব মানুষের জন্য একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমঅধিকার ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন ছিল।
এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর একটি উদ্বৃতি তুলে ধরেন. ‘বাঙালি জাতি এমন একটি সুশৃঙ্খল বিশ্ব দেখতে চায় যেখানে ধনী-গরিব, সাদা-কালো সব মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সামাজিক ন্যায়বিচার, ক্ষুধা, দারিদ্র্য এবং আগ্রাসনমুক্ত সমাজব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। ’
ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও স্বচ্ছ নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যের দিকেই ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে। আমাদের সংবিধানেও গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে যেখানে মৌলিক মানবাধিকার এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে এবং নারীর সমঅধিকারের সুযোগ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী (সংসদ নেতা), স্পিকার,বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা নারী। জাতীয় সংসদে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রয়েছেন। স্থানীয় সরকারেও এক-তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব করছেন।
ডেপুটি স্পিকার তার বক্তৃতায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও মায়ানমার থেকে আগত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী ও অনিবন্ধিত মায়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় দান, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও শিক্ষার মত মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
এ সময় ডেপুটি স্পিকার ঢাকাতে আগামী বছরের ১-৫ এপ্রিল আইপিইউ’র পরবর্তী সম্মেলনে অংশগ্রহণে বিশ্ব নেতাদের আমন্ত্রণ জানান। সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্ব নেতারা তার এ প্রস্তাবে সম্মতি প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
এসএম/এমজেএফ