ঢাকা: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
বিশেষ করে সভাপতি পদে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
আগামী শুক্রবার থেকে সোমবার (২৮ থেকে ৩১ অক্টোবর) পর্যন্ত চার দিনব্যাপী ১১তম কংগ্রেস (জাতীয় সম্মেলন) করবে দেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল সিপিবি।
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) কংগ্রেসের উদ্বোধন করা হবে। শনিবার (২৯ অক্টোবর) থেকে মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী কংগ্রেসের কাউন্সিল অধিবেশন হবে।
কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র, রাজনৈতিক কর্মসূচি, ঘোষণাপত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও প্রস্তাব পাস হবে। কাউন্সিলের শেষ দিন সোমবার (৩১ অক্টোবর) নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করা হবে।
কমিউনিস্ট পার্টির প্রচলিত রীতি অনুসারে প্রতি ৪ বছর পর পর কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।
সিপিবির একাধিক সূত্র জানায়, এবারের কংগ্রেসে পার্টির প্রধান পদ সভাপতির পদটিতে পরিবর্তন আসছে না বলেই মনে করছেন পার্টির নেতাকর্মীরা। গত চার বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। বর্তমানে সিপিবির সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের জনপ্রিয়তা শীর্ষে।
পার্টির বাইরেও রাজনৈতিক অঙ্গনে সেলিমের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। ষাট ও সত্তরের দশকের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র-ছাত্রী সংসদের (ডাকসু) প্রথম ভিপি সেলিমের পরিচিতি রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।
এছাড়া ১৯৯৩ সালে পার্টির ভেতর থেকেই সিপিবিকে বিলুপ্তির চেষ্টা হয়। সে সময় পার্টিকে রক্ষায় প্রধান নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করনে সেলিম। এরপর তিনি চারবার পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং গত ২০১২ সালের দশম কংগ্রেসে সভাপতি নির্বাচিত হন।
এসব বিবেচনায় পার্টি প্রধান হিসেবে সিপিবির নেতাকর্মীরা এই মুহূর্তে অন্য কাউকে চিন্তাও করছেন না।
তবে সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন কেউ নির্বাচিত হতে পারেন বলে পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমদ বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। এ পদে আলোচনায় রয়েছেন পার্টির বর্তমান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ শাহ আলম। কাউন্সিলে তিনি প্রার্থী হতে পারেন বলেও জানা গেছে। এছাড়া ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বর্তমান সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনের নামও আলোচনায় আছে। আবার সৈয়দ আবু জাফরকে পুনর্নির্বাচিত করার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সিপিবির অন্য একটি সূত্র জানায়, পার্টির গঠনতন্ত্র সংশোধন করে সভাপতিমণ্ডলীর পরিবর্তে সম্পাদকমণ্ডলী পদ্ধতিতে আসার একটি প্রস্তাব আছে। তবে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটি এ প্রস্তাবটি গ্রহণ করেনি। দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রস্তাবকারী এটি কংগ্রেসে তুলতে পারেন।
কংগ্রেসে প্রস্তাবটি পাস হলে সভাপতিসহ সভাপতিমণ্ডলী বিলুপ্ত হবে। সেটি হলে পার্টির প্রধান পদ হবে সাধারণ সম্পাদক। এটি হলেও মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমকেই পার্টি প্রধান (সাধারণ সম্পাদক) রাখতে চায় দলের নেতাকর্মীরা।
এছাড়া পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সার্বক্ষণিক কর্মী হওয়ার বিধান তুলে দেওয়ারও প্রস্তাব রয়েছে। কংগ্রেসে এ প্রস্তাব পাস হলে সভাপতিমণ্ডলীতে রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে পার্টির বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ, কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক সদস্য ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহিন হোসেন প্রিন্সের নাম আলোচনায় রয়েছে।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের পার্টির গঠনতন্ত্র অনুসারে কংগ্রেসে কাউন্সিলরদের গোপন ব্যালটে নেতা নির্বাচন করা হয়। নেতা নির্বাচন করবেন কাউন্সিলররা’।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
এসকে/এএসআর