সাতক্ষীরা থেকে: ভোরের আলো ফোটার পর কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের আড়মোড়া ভেঙে বাস এসে থামলো কালীগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায়। শ্যামনগরগামী বাসের বেশ কয়েকজন যাত্রীই যাচ্ছেন রাসমেলা।
রাসমেলা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হয় আগে থেকেই। কালীগঞ্জ মহতপুর থেকে আরও প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে মাদার নদীর ভেটখালী ঘাট থেকে শত শত ট্রলার ছাড়বে শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায়। পরিবার-পরিজন এবং দল বেঁধে রাসমেলায় যাওয়ার রেওয়াজটা জানা গেল মহতপুরে এসেই।
রাসমেলায় যাওয়ার জন্য আমরা সঙ্গী হচ্ছি মহতপুরের ডাক্তার জিয়াদ আলীর ব্যবস্থাপনায় ভাড়া করা লঞ্চে। তিনি জানালেন, প্রস্তুতিটা শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগেই। খাওয়া-দাওয়া, থাকার প্রস্তুতি, ওষুধ ইত্যাদি। কথার মধ্যেই পাওয়া গেল সুন্দরবন রক্ষার বিষয়টিও।
বললেন, “এবার কাঠখড়ি নিয়ে যাচ্ছি। কাঠ নিয়ে যাচ্ছে আরও অনেকেই। বলতে গেলে যারা যাচ্ছেন সবাই ট্রলারে করে কাঠ নিয়ে যাবেন। মেলায় যাওয়া-আসাসহ দু’তিন দিন থাকবেন। সেখানে যাওয়ার পথে ও মেলায় গিয়ে রান্নার কাজে ব্যবহার হবে এই কাঠ। ”
এই দলের আরেকজন মহতপুরের মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমান বলছিলেন, “সুন্দরবনে কাঠ সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ। গতবার মেলায় গিয়ে অনেকেই সুন্দরবনের কাঠ কেটেছিল, এজন্য জরিমানা গুণতে হয়েছে। তাই এবার সবার ঘরে ঘরে শুকনো কাঠ নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি। ”
পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় গাছের বন অর্থাৎ সুন্দরবনের প্রতি ভালবাসাটা স্থানীয়রাও কদর দিচ্ছেন, মেলায় যেন ক্ষতি না হয় সেখানকার গাছগুলোর।
বাসের একজন যাত্রী জানালেন, তিনি ঢাকা থেকে আগে থেকেই পরিচিতদের সঙ্গে ট্রলারে করে যাবেন মেলায়। বন্ধু-বান্ধব মিলে প্রায় ৩০ জনের দল।
রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে মেলা চলে তিন দিন। যাওয়া-আসা মিলে পাঁচ দিন। স্থানীয়রা জানালেন, চার থেকে পাঁচশ’ ট্রলারে দলে দলে মানুষ যাবে সেখানে।
ভেটিঘাটে ট্রলারে উঠে রওয়ানা দিয়ে পথিমধ্যে বনবিভাগের অফিস থেকে অনুমতির পর যাত্রা শুরু হবে মেলায়। মাদার নদী হয়ে সুন্দরবনের মধ্যে ছোট বড় নদী পেরিয়ে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে ট্রলারে প্রায় ১২ ঘণ্টা যাত্রার পর মিলবে মেলার দেখা।
কুঙ্গা ও মরা পশুর নদীর মোহনায় জেগে উঠা দুবলারচরে ১২ নভেম্বর শুরু হয়ে মেলা চলবে তিন দিন। মাটির তৈজসপত্রসহ মেলায় মিলবে হরেক জিনিসপত্র। মিলবে সমুদ্রে জেলেদের ধরা মাছের শুঁটকিও।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
এমআইএইচ/এইচএ/