ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

আজিমপুরে সড়ক সংস্কার এখন বিরক্তির কারণ

জান্নাতুল ফেরদৌসী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৬
আজিমপুরে সড়ক সংস্কার এখন বিরক্তির কারণ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজধানীর আজিমপুরের নতুন পল্টন লেন। এ সড়ক ধরে সামনে এগোলে শেষ মাথা গিয়ে ঠেকেছে বিজিবি’র ৩ নম্বর সড়কের সঙ্গে। প্রতিদিন প্রায় লাখ মানুষের যাতায়াত এ সড়ক দিয়ে।

ঢাকা: রাজধানীর আজিমপুরের নতুন পল্টন লেন। এ সড়ক ধরে সামনে এগোলে শেষ মাথা গিয়ে ঠেকেছে বিজিবি’র ৩ নম্বর সড়কের সঙ্গে।

প্রতিদিন প্রায় লাখ মানুষের যাতায়াত এ সড়ক দিয়ে।

অথচ সংস্কারের নামে প্রায় একমাস ধরে চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। ধীরগতির এ নাগরিক সেবার উন্নয়ন কিংবা সংস্কারে রীতিমতো অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ রাস্তা সংস্কার ১৫দিনেই সম্ভব। অথচ উন্নয়নের নামে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ভোগান্তির এ সংস্কার কার্যক্রমকে বিরক্তি হিসেবেই দেখছেন শহরবাসী।

শনিবার (১২ নভেম্বর) রাজধানীর আজিমপুরের নতুন পল্টন লেন ও আশপাশের সড়কে ঘুরে এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এ সড়কের লালবাগ অংশে দড়ি টেনে রাখা হয়েছে। তাই বন্ধ রয়েছে রিকশা-ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল। এজন্য নিত্যদিনই ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারী ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় ওষুধ বিক্রেতা আব্দুস সালাম বলেন, ‘মাত্র কয়েকদিনের কাজ, বেশি হলে ১৫দিন। অথচ একমাস ধরে ফেলে রাখ‍া হয়েছে। মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে। কী করার আছে, উন্নয়নের ভোগান্তি তো সহ্য করতেই হইবো। ’

বেশ মনোযোগ দিয়েই কথাগুলো শুনছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আখতার হোসাইন। এবার সালামের সঙ্গে সুর মেলালেন তিনিও।

বললেন, প্রায় ২০ বছর ধইরা এ রাস্তার কারণে ভ‍ুগছি আমরা। ড্রেনের পানি রাস্তায় উইঠা যাইতো। বৃষ্টি হলে তো কথাই নাই। এখন মেরামত চলাতাছে, ভালো কথা। কিন্তু দিনের পর দিন ফেলে রাখায় সেই দুর্ভোগই বাড়ছে।

ভোগান্তির এই সড়কটি বেশ কষ্টে পা হয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন শিক্ষার্থী শান্তা ইসলাম। বললেন তার প্রতিদিনকার কষ্টের যাতায়াতের কথা। তার ভাষায়, ‘স্কুলে যাওয়ার সময় নিত্যদিনই কাদ‍া পার হয়ে যেতে হয়। রিকশাও চলে না। কাদা মাখা পুরো রাস্তা হেঁটেই যেতে হয়। ’

জনদুর্ভোগ চরম পর্যায়ে গেলেও সংস্কারের নামে ধীরগতির এই উন্নয়ন ভোগান্তির সঙ্গে বেশ মানিয়েও নিয়েছেন স্থানীয় ও পথচারীরা।

খানিকটা উপহাসের সুরে আবু ইউসুফ বলেন, ‘আমগো যতই কষ্ট হোক, তাতে হেগো কী? হেরা যে এই রাস্তা ঠিক কইরা দিতাছে হেইডাই তো বিশাল ব্যাপার। এইডা এখন গা সওয়া অইয়া গেছে। ’
 
এদিকে নতুন পল্টন লেনের এ অংশটি বন্ধ থাকায় লালবাগ মোড় থেকে কয়েকটি সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়।

সঠিক পরিকল্পনা, সমন্বয়হীনতা ও জবাবদিহিতার অভাবে  রাজধানীবাসীর জনদুর্ভোগ বাড়ছে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব।

তিনি বলেন, ‘উন্নয়নমুলক কাজের প্রথম সমস্যা হলো জনদুর্ভোগ মাথায় রেখে পরিকল্পনা না করা। ফলে একমাসের কাজে সময় লাগে ছয় মাস। দ্বিতীয়টি হলো জবাবদিহিতার অভাব। এ দু’টি কারণে আমাদের পুরো উন্নয়ন কার্যক্রমকে বেহাল দশায় ফেলেছে। ’

‘এলাকার উন্নয়ন সংস্কারের কাজে জনদুর্ভোগ এড়াতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হাত দেওয়া জরুরি। ’

এদিকে সড়কটির সংস্কারে কালক্ষেপণ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে একে অন্যকে দুষছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী।

স্থানীয় ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ন কবির বাংলানিউজকে  বলেন, ‘উন্নয়নের কাজের দায়িত্ব এখন পুরোপুরি চলে গেছে সিটি করপোরেশনের হাতে। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। ’  

‘এরপরও যথেষ্ট খোঁজ-খবর রাখার চেষ্টা করি। এখন দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার আর কন্ট্রাক্টর যদি গড়িমসি করে তাহলে আমাদের কি করার আছে?’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাছের সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘এ কাজের জন্য যথেষ্ট সময় রয়েছে আমাদের হাতে। তাছাড়া আমরা তো শুধু একটা কাজ করি না। এক সঙ্গে অনেকগুলো কাজ করতে হয়। সে কারণেই একটু দেরি হচ্ছে। ’

‘এরপরও কাজ দ্রুত শেষ করতে বিষয়টি আরও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তদারকি করা হবে,’ যোগ করেন খায়রুল বাছের।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২. ২০১৬
জেডএফ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।