ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেকে) হাসপাতালের বর্হিবিভাগ। প্রতিদিন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে আসা হাজারও রোগীকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেওয়া হয় চিকিৎসা সেবা।
তবে তথ্যসেবা ও দিক নির্দেশনার ঘাটতি থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এখানে আসা রোগী ও রোগীর সঙ্গে স্বজনরা। স্বল্প মূল্যের চিকিৎসা সেবার নামে ভোগান্তি যেন তাদের সঙ্গী।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে ঢামেক হাসপাতালের বর্হিবিভাগে গিয়ে ১০ টাকা মূল্যের টিকিট সংগ্রহ করতে দেখা যায় রোগী ও রোগীর স্বজনদের। টিকিট কাটার জন্য রোগীদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। একটি টিকিটের জন্য প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। টিকিট মিললেও ডাক্তারের দরজা পর্যন্ত পৌঁছাতে অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
বর্হিবিভাগে যে সব রোগী আসেন, তাদের বেশির ভাগই গরিব, নিম্ন আয়ের মানুষ, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত কিংবা অল্প বা অর্ধশিক্ষিত মানুষ। রোগীরা বর্হিবিভাগের আসার পর কীভাবে চিকিৎসা সেবা নেবেন, সেটা বুঝে উঠতে পারেন না। চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য তথ্যকেন্দ্রের কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও অভিযোগ আছে। এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা একজন রোগী কমপক্ষে ৫ ঘণ্টার আগে বাড়ি ফিরতে পারেন না।
নিউমোনিয়ার সমস্যা নিয়ে বর্হিবিভাগে মায়ের সঙ্গে শিশু বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছে ৩ বছর বয়সী মিমি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা। ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে এক সময় কান্না জুড়ে দিলো মিমি। মিমির মা জাহানার বেগমের অভিযোগ, সকাল ৮টায় টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এখান বাজে ১২টা। এখনও মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে পারেননি।
তিনি বলেন, কম টাকায় চিকিৎসা সেবা হওয়ায় ভোগান্তি বেশি। লাইনে দাঁড়িয়েই দিন পার। এমনও হয়েছে টিকিট কেটে চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাকে।
হাসপাতালে কাজ চলে অনেক ধীর গতিতে, চিকিৎসার চেয়ে ভোগান্তি বেশি বলেও জানান জাহানারা।
নোয়াখালী থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মমতাজ বেগম অভিযোগ করেন, এই প্রথম ঢামেক হাসপাতালে এসছেন তিনি। চিনতে না পারায় প্রথমে জরুরি বিভাগে গিয়েছিলেন। বর্হিবিভাগ খুঁজে পেতে অনেক সময় লেগেছে। সকাল ৮টায় এলেও টিকিট কেটেছেন ১০ টার সময়। এখন তিনি ডাক্তার দেখানোর জন্য লাইনে অপেক্ষমাণ।
বর্হিবিভাগের তথ্য পরামর্শ সেবা কেন্দ্রের লুৎফুর রহমান লাভলু বাংলানিউজকে বলেন, রোগীর চাপ বেশি। সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি রোগী টিকিট কাটেছে। আমরা সেবা দিতে গিয়ে প্রতিদিন হিমশিম খাচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। এ কথা সত্য যে আমরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে পারি না। আমাদের লোকবল অনেক কম। অনেক সময় এমনও হয় বুঝতে না পেরে, ডাক্তার না দেখিয়ে অনেক রোগী চলে যান।
সেবার বিষয়ে টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরত মো. মোজাম্মেল বাংলানিউজকে বলেন, রোগীর চাপ বেশি। রোগীর চাপ থাকলে কাজের চাপ বাড়ে। এছাড়া ১টার পরে আর টিকিট দেওয়া হয় না।
সকাল ৮ থেকে দুপুর ১ পর্যন্ত তাদের ব্যাপক ব্যস্তার মধ্যে থাকতে হয় বলেও জানান তিনি।
তথ্যসেবা ও ভোগান্তির বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. খাজা আব্দুল গফুর বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাতার পর থেকে রোগীর সংখ্যা দিন-দিন বাড়ছে। রোগী বেড়েছে কিন্তু হাসপাতালের জায়গা বাড়েনি এবং জনবলও আগের মতই আছে।
তিনি বলেন, যে পরিমাণ রোগী আমরা প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি, তা আমাদের ধারণ ক্ষমতার বাইরে। এজন্য রোগীরা ভোগান্তি শিকার হন, এটা নিজেরাই স্বীকার করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৬
আরএটি/টিআই