ঢাকা: অপর্যাপ্ত চিকিৎসক, দায়িত্বে অবহেলা, ওষুধের কৃত্রিম সংকট, কর্মকর্তাদের অসৌজন্যমূলক আচরণসহ নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত রাজধানীর মুগদা ৫শ’ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। শুধু তাই-ই নয়, এখানে রাতে থাকেন না কোনো ডিউটিরত চিকিৎসক।
এক সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতাল পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় নানা অবহেলার চিত্র। যেখানে চিকিৎসার জন্য হাজারো মানুষ হাসপাতালের বারান্দায় অপেক্ষা করছিলেন। হাসপাতালের চিত্র একেবারেই উল্টো। ফটকের সামনে তথ্যকেন্দ্র; সেখানকার চেয়ারে দেখা যায়নি কোনো কর্মকর্তাকে। ওয়ার্ডের বেশিরভাগ বেড খালি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, হাসপাতালের সেবায় যথেষ্ট গড়িমসি রয়েছে বলে অনেক রোগী এখানে আসতেই চান না। আসলেও চিকিৎসক, নার্সদের উদাস আচরণে অনেকে ঢাকা মেডিকেলে চলে যান বলে জানা গেলো।
‘কোনো সমস্যা হলে সহজে ডাক্তার পাওয়া যায় না। নার্সদের কাছে কিছু বললেও শুনতে চান না। উল্টো ধমক দেন,’ কথাগুলো জানান হাসপাতালে ভর্তি সাইফুল নামে এক রোগী। পিঠে ও পেটের ব্যথার সমস্যা নিয়ে চারদিন ধরে ভর্তি রয়েছেন তিনি। হাসপাতালের বিরুদ্ধে তার অনেক অভিযোগ।
তিনি বলেন, ‘ডাক্তার ঠিকমতো দেখলেও নার্সরা ভালোভাবে সেবা দেন না। ওষুধের স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যান। হাসপাতাল থেকে ওষুধ চাইলেই বলে- ওষুধ নেই। কিনে আনতে হবে। আর চিকিৎসক সংকট না হয় বাদই দিলাম।
চিকিৎসক সংকট
দ্বিতীয় তলায় বহিঃবিভাগ। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শত শত রোগী লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন চিকিৎসক দেখানোর জন্য। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর রোগীদের কাছে পাওয়া গেলো ডাক্তার না থাকার অভিযোগ। অনেক রোগী জানালেন, তিনদিন ধরে এসেও ঘুরে যাচ্ছেন তারা। ডাক্তার নেই তারপরেও কেন টিকিট দেওয়া হচ্ছে রোগীদের জানতে চাইলে কাউন্টারে থাকা এক কর্মী জানালেন, ডাক্তার থাকুক না থাকুক আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা টিকিট দেওয়ার কাজ করি। চারিদেকে ঘুরেও পাওয়া গেলো না কোনো নজরদারি। নেই কোনো ইনচার্জও।
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ওয়ার্ডে ঝুলছে তালা
হাসপাতালের অষ্টম তলায় বার্ন অ্যান্ড পাস্টিক সার্জারি ওয়ার্ড। সেখানকার দুটি গেটেই ঝুলছে বড় বড় তালা। এছাড়া ডায়ালাসিস ওয়ার্ড ও চর্ম এবং যৌন ওয়ার্ডও বন্ধ থাকতে দেখা যায়। পঞ্চম তলায় কার্ডিওলজি বিভাগের মেইন গেট বন্ধ। একটু ঘুরে পেছন দিকে দিয়ে সে ওয়ার্ডে গিয়েও মনে হলো না সেটি হাসপাতালের কোনো অংশ। সেখানকার বেশিরভাগ বেড খালি। চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কক্ষগুলোতেও তালা দেওয়া। এর মধ্যে একটি কক্ষের দরজার নিচ দিয়ে নোংরা পানি বাইরে চলে এসেছে। কক্ষটির উল্টোদিকের কক্ষে ছোট করে লেখা ড্রেসিংরুম। এ দৃশ্যই অবশ্য বুঝিয়ে দিলো হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার বিষয়টি।
কর্মকর্তাদের অসৌজন্যমূলক ব্যবহার
হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশ কিছুটা সহনীয় হলেও নার্সদের দৌরাত্ম্যে জিম্মি এখানে ভর্তিরত রোগীরা। বেশিরভাগ রোগীদের অভিযোগ, নার্স এবং ওয়ার্ড বয়রা তাদের সঙ্গে অশভনীয় আচরণ করেন। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগীদের। তাদের সম্পর্কে ওয়ার্ড মাস্টারকে কিছু বলতে গেলে উল্টো রোগীদের উপরই ক্ষেপে যান ওয়ার্ড মাস্টার।
এছাড়াও রোগীদের সঙ্গে কথা বলে ওষুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির সিন্ডিকেট সম্পর্কে জানা যায়।
হাসপাতালের বিভিন্ন অসুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ দূর দূর আচরণ করেন। বিশেষ করে ওয়ার্ড বন্ধের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো উত্তর মিললো না হাসপাতাল পরিচালক আজিজুন নাহারের। তিনি বলেন, বার্ন ইউনিট বন্ধ নয়। এটি সার্জারির কাছে দেওয়া আছে। এখানে সব সিস্টেম চালু। রোগী আসলে এখানে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
অন্য অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সব অভিযোগ সত্য নয়। তবে কিছু সমস্যা তো রয়েই যায়। তাছাড়া আমাদের সাড়ে ৫ লাখ স্কয়ার ফুটের ১৩ তলা এ হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মাত্র ৩০ জন। তিন শিফটে ডিউটি করেন তারা। তার মানে প্রতি শিফটে মাত্র ১০ জন করে কাজ করেন। তারপরেও আমাদের ব্যবস্থাপনা অনেক ভালো।
তবে জনবল নিয়োগের কথা থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখনও এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি বলেও জানান পরিচালক।
** মুগদা হাসপাতালে অসহায় মনিরুলরা!
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৬
জেডএফ/আইএ