আদমদীঘির শাঁওইল গ্রাম থেকে ফিরে: প্রতি বছর শীতে দুস্থদের মাঝে বিতরণের জন্য সরকারিভাবে কম্বল কেনা হয়। যার সিংহভাগই উৎপাদিত হয় শাঁওইল গ্রামে।
এতে করে লাভের বারো আনাই চলে যায় মধ্যসত্বভোগী পাইকারি ব্যবসায়ীদের পকেটে। তাই সরকার যদি দরপত্রের মাধ্যমে সরাসরি তাঁতিদের কাছ থেকে এই কম্বলগুলো কিনে নেয় তাহলে লাভবান হতে পারতেন ক্ষুদ্র তাঁত মালিকরা।
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরৎপুর ইউনিয়ন তন্তুবায় সমবায় সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, ১৯৭৯-৮০ সালে শাঁওইল গ্রামের হাতে গোণা কয়েকজন ব্যক্তি কম্বল বানানোর তাঁত মেশিন স্থাপন করেন। এরপর থেকে দরিদ্র মানুষগুলো নিজেদের এ পেশার সঙ্গে যুক্ত করতে থাকেন। সময়ের ব্যবধানে গ্রামের পর গ্রাম ছড়িয়ে পড়ে এ তাঁত শিল্প। এখানকার তৈরি করা কম্বলসহ নানা ধরনের বস্ত্র দেশের মধ্যে ব্যাপক পরিচিত লাভ করে। ১৯৮০ সালের পর থেকে এ গ্রামে হাট বসতে শুরু করে।
তিনি আরও বলেন, সপ্তাহের রোববার ও বুধবার হাট বসে। প্রতি বছর শীতের শুরু থেকে চারমাস এ ব্যবসার পিক সিজন চলে। পিক সিজনের প্রত্যেক হাটবারে কমপক্ষে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা বেচাকেনা হয়। সিংহভাগ বিক্রি হয় কম্বল। বছরের বাকি সময় বেশি বিক্রি হয় সুতা। এ আট মাসে দিনে গড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা বেচাবিক্রি হয়।
মোজাম্মেল হোসেন বলেন, শাঁওইল হাটের প্রধান প্রবেশ সড়ক অত্যন্ত সরু। পাশাপাশি সড়কটি প্রচণ্ড আঁকাবাঁকা। ফলে এ সড়কে অনেক কষ্ট করে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। গ্রামের অনেক রাস্তাঘাট এখনও পাঁকা হয়নি। আবার অনেক রাস্তার কার্পেটিং উঠে নষ্ট হয়ে গেছে।
প্রায় বছর ছয়েক আগে হাট থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে মুড়ইল এলাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংক স্থাপিত হয়েছে। আরেকটি বেসরকারি ব্যাংক এ এলাকায় শাখা খোলার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
এর আগে ব্যবসায়ীদের সান্তাহারে গিয়ে ব্যাংকের কাজ সারতে হতো। তখন ব্যবসায়ীদের প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করতে হয়েছে। এখন অর্থনৈতিক লেনদেনের সেই সমস্যা খানিকটা দূর হয়েছে বলেও জানান মোজাম্মেল হোসেন।
তন্তুবায় সমবায় সমিতির এই সভাপতি মনে করেন, যেসব সমস্যা রয়েছে তা সমাধান করা গেলে এবং সরকারিভাবে সরাসরি তাঁতিদের কাছ থেকে কম্বল কেনা হলে বৃহৎ ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাবে শাঁওইল গ্রাম।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
এমবিএইচ/জিপি/এমজেএফ
** শাঁওইল গ্রামে কম্বলের হাট
** কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙে তাঁত পল্লীর মানুষের