ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

লুডু খেলে সচেতন হচ্ছেন দিনাজপুরের নারীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
লুডু খেলে সচেতন হচ্ছেন দিনাজপুরের নারীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লুডু খেলে পারিবারিক সহিংসতা বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন দিনাজপুরের নারীরা। আর এ ব্যাপারে তাদের সাহায্য করছে পল্লী শ্রী নামে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)।

দিনাজপুর: লুডু খেলে পারিবারিক সহিংসতা বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন দিনাজপুরের নারীরা।

আর এ ব্যাপারে তাদের সাহায্য করছে পল্লী শ্রী নামে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)।

দিনাজপুর সদর উপজেলার ৪ নং শেখপুরা ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রাম। এখানে বসবাস করে প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবার। এখানকার নারীরা প্রতিদিন বিকেলে লুডু খেলে তাদের অবসর সময় কাটান। লুডুই তাদের একমাত্র বিনোদন।  

গত এক বছর থেকে ওই গ্রামের নারীদের মধ্যে পারিবারিক নির্যাতন রোধে সচেতনতা বাড়াতে পল্লী শ্রী এই লুডু খেলাটিকে একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে শিখিয়েছেন।

বর্তমানে এই এলাকার নারীরা লুডু খেলে পারিবারিক নির্যাতন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের এর কুফল সম্পর্কে জানাচ্ছেন। ফলে ওই গ্রামে কমতে শুরু করেছে পারিবারিক সহিংসতা। গত এক বছর ধরে ওই গ্রাম ও এর আশপাশের এলাকার নারীদের লুডু খেলার প্রতি আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।

দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা লুডু খেলার মাধ্যমে পারিবারিক নির্যাতন সম্পর্কে সচেতন হয়ে গড়ে তুলেছেন প্রতিবাদী দল। ইতোমধ্যে সচেতন এই নারীরা সমাজের নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়িয়ে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের পারিবারিক নির্যাতনের কুফল সম্পর্কে ধারণা দিয়ে পরিবারে এনেছেন পরিবর্তন।

এ খেলায় অংশগ্রহণকারী দিনাজপুর সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের রুবিনা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ছোট থেকে দেখেছি নারীরা অবসর সময়ে লুডু খেলতেন। কিন্তু গ্রামগঞ্জে লুডু খেলা যখন বিলুপ্ত ঠিক তখনই দিনাজপুর পল্লী শ্রীর পরিকল্পনা ও উদ্যোগে ভিন্ন পদ্ধতিতে চালু হয় লুডু খেলা।  

প্রায় পাঁচ ফুট কাপড় দিয়ে তৈরি এই লুডুর ঘর। লুডুটিতে ২৫টি ঘর রয়েছে। যার প্রতিটি ঘরে পারিবারিক নির্যাতন সম্পর্কে রাখা হয়েছে একটি করে প্রশ্ন। এই লুডু খেলায় অংশগ্রহণকারীদের প্রথমে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর বলে দেওয়া হয়। খেলোয়াররা যে যখন যে ঘরে গিয়ে পৌঁছাবে সে ঘরের প্রশ্নের উত্তর তাকে দিতে হবে।  

এভাবে খেলতে খেলতে পারিবারিক নির্যাতন সম্পর্কে সচেতন হই আমরা। সচেতনতা বৃদ্ধির পর নির্যাতিত নারীদের পাশে দাঁড়াই। এখন নারী নির্যাতনের কথা শুনলেই আমরা সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ করি, নির্যাতিত সেই নারীকে সাহায্য করি এবং পরিবারের পুরুষটিকে বোঝাই।  

লুডু খেলার মাধ্যমে সচেতন হওয়া নারীদের কাছ থেকে উপকৃত পারিবারিক নির্যাতনের শিকার দিনাজপুর সদর উপজেলার ৮ নং রেলঘুন্টি এলাকার ট্রাক চালক আব্দুর রহমানের স্ত্রী নূরজাহান বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্বামী এক সময় কারণে-অকারণে আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। আমি মনে করতাম এটা তার অধিকার।  

একদিন তার নির্যাতনে গুরুতর আহত হই। তখন সচেতন ওই নারীরা আমার পাশে দাঁড়ায়। তারাই চিকিৎসার মাধ্যমে আমাকে সুস্থ করে তোলে। পরে তারা আমার স্বামী ও আমাকে পারিবারিক নির্যাতনের কুফল সম্পর্কে বোঝায়। এরপর থেকে আমার স্বামী আর কখনো আমার ওপর নির্যাতন করেননি। বর্তমানে আমাদের সুখি পরিবার।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।