ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

থমথমে দক্ষিণখান, ঘরে ফেরার অপেক্ষায় অনেক পরিবার

রীনা আকতার তুলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬
থমথমে দক্ষিণখান, ঘরে ফেরার অপেক্ষায় অনেক পরিবার দক্ষিণখানে ফেরার অপেক্ষায় অনেক পরিবার/ছবি: শাকিল আহমেদ

‘ছেলে-মেয়ে নিয়ে দু’দিন ধরে রাস্তায়, মেয়েরা স্কুল ও প্রাইভেট পড়তে যেতে পারছে না। বোমার আওয়াজ শুনে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছি। রাত থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে, ঘরে ফিরতে পারছি না, খুব আতঙ্কে আছি।’

দক্ষিণখান থেকে: ‘ছেলে-মেয়ে নিয়ে দু’দিন ধরে রাস্তায়, মেয়েরা স্কুল ও প্রাইভেট পড়তে যেতে পারছে না। বোমার আওয়াজ শুনে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছি।

রাত থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে, ঘরে ফিরতে পারছি না, খুব আতঙ্কে আছি। ’

রোববার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনার পূর্ব পাড়ার মসজিদ রোডের সূর্য ভিলায় উদ্ধার অভিযান চলাকালীন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন মোহাম্মদ আলম। তিনি একজন শিক্ষক।  

সূর্য ভিলার পাশের বাড়ি আহসান ভিলায় ভাড়া থাকেন মোহাম্মদ আলম। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর থেকেই পরিবার নিয়ে রাস্তায় রয়েছেন তিনি।  

দক্ষিণখানে ঘরে ফেরার অপেক্ষায় অনেক পরিবার

আলম বাংলানিউজকে বলেন, অনুমানিক শুক্রবার দিনগত রাত ২টার দিকে জানতে পারি, আমার বাসার পাশে একটি জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বের হয়ে দেখি পুরো রাস্তায় পুলিশ। রাতে আর ঘুম হয়নি।  

তিনি বলেন, শনিবার দুপুরে বোমার আওয়াজ শুনে পরিবার নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে যাই। পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই নিতে পারিনি।  

তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানান, যতো দ্রুত সম্ভব যেনো উদ্ধার অভিযান শেষ করা হয়। তারা ঘরে ফিরতে চান।

বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তার স্ত্রী নাজমা এবং দুই মেয়ে রিমি ও মেহরুনের চোখে ধোঁয়া লেগে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন।  

আলমের মতো একই অবস্থা বোমার আতঙ্কে ঘর ছেড়ে আসা আজগরের। শুক্রবার রাত ২টার দিকে তিনি পুলিশ আসার খবর পান। পরে জানতে পারেন সূর্য ভিলা নামে ওই বাড়িতে জঙ্গি রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য তারা বাসা ছেড়ে চলে আসেন।

তিনি জানান, তিনি তার স্ত্রী মিনাসহ দুই সন্তান আশরাফুল ইসলাম ও মেয়ে নাইমা ইসলামকে এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে এসেছেন।

দক্ষিণখানে অভিযান চলছে

এদিকে, জঙ্গি আস্তানা খুঁজে পাওয়ায় দক্ষিণখান এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। মো. শফিক, মো. রহিম ও বকুল মিয়া দক্ষিণখান এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা।  

তারা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কখনও ভাবকেই পারিনি যে আমাদের এলাকায় এ ধরনের একটি জঙ্গি আস্তানা রয়েছে। এছাড়া এই জঙ্গিদের কাউকে আমরা চিনি না।  

তারা জানান, এ ধরনের ঘটনা দেশের জন্য ভয়াবহ মেসেজ। নারী ও শিশুরা জঙ্গিও দলের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। দেশের ধ্বংস নেমে আসবে।  

তাদের দাবি, সরকার যতোই বলুক দেশে জঙ্গি নেই, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আজকের এই ঘটনাই প্রমাণ দেয়, দেশে জঙ্গি রয়েছে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সরকারকে এই জঙ্গি দমনে আরও তৎপর হতে হবে বলেও জানান তারা।

অভিযানের বিষয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, শনিবার অভিযানের সময়ে যে কাঁদানে গ্যাস ও গ্রেনেড বিস্ফোরণ হয়েছিল, এর ধোঁয়া বের করার কাজ শেষ হয়েছে।  

বোমা নিষ্ক্রিয়ের বিষয়ে বম্ব ডিজপোজাল ইউনিটের এডিসি ছানোয়ার হোসেন জানান, শনিবার থেকে এ পর্যন্ত ১০টি বোম নিস্ক্রিয় করা হয়েছে। আরও বোমা নিষ্ক্রিয়ের কাজ চলছে। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জঙ্গি আস্তানার খবর পেয়ে শুক্রবার রাত থেকে দক্ষিণখানের সূর্য ভিলার বাড়িটি ঘিরে ফেলে পুলিশ। শনিবার দুপুরে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায় পুলিশ। তারা আত্মসমর্পণ না করায় ওই বাড়িতে দুপুরে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে এক নারী জঙ্গি ও তানভির কাদেরির ছেলে আফিফ কাদেরি নিহত হন। নিহত ওই নারী জঙ্গির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ওই কিশোর জঙ্গির লাশ উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা
আরএটি/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।