ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

খাঁচার জন্য পাখি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০১৭
খাঁচার জন্য পাখি খাঁচার পাখি- ছবি: কাশেম হারুন

ঢাকা: খাঁচার জন্য পাখি! এ আবার কেমন কথা? যে কেউ এ প্রশ্ন করতেই পারেন। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির যুগে কথাটি সত্যে রূপ নিয়েছে আরও আগেই।

বিশ্বজুড়ে পরিবেশবাদীরা যেকোনো বন্যপ্রাণীরই মুক্ত বিচরণের পক্ষে। আর দেশে দেশেও কোন প্রাণী, কী উপায়ে পোষ মানানো যাবে অথবা যাবে না, তা নিয়েও রয়েছে রাষ্ট্রীয় আইন।

তাই অনেক প্রাণীর মতো বন্যপাখিও এখন আর খাঁচায় পোষা হয় না। ঝুল বারান্দায় যে খাঁচাটিতে এখন দৃষ্টিনন্দন হরেক রঙের পাখি নাচানাচি করে ও গান গায়, তা খাঁচারই পাখি। খাঁচার জন্যই জন্ম এদের।
 
বেশ কয়েক দশক আগে থেকেই খাঁচায় পোষার জন্য পাখির প্রজনন শুরু হয় উন্নত দেশগুলোতে। এর ঢেউ এখন বাংলাদেশেও এসে পড়েছে। এ ধরনের পাখির জন্য যে কাজটি করা হয়- প্রথমে একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির দৃষ্টিনন্দন কোনো পাখিকে বাছাই করা হয়। এরপর একই প্রজাতির অন্য রঙের একটি পাখির সঙ্গে ব্যবস্থা করা হয় প্রজননের। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই হয় সংকরায়ণ। জন্ম হয় দু’টি ভিন্ন রঙের মিশ্রণে নতুন আরেকটি রঙের পাখি।
 
এই নতুন ধরনের পাখির সঙ্গে আবার অন্য রঙের পাখির প্রজনন হয়। এভাবেই প্রজাতি ঠিক রেখে ভিন্নমাত্রা আনা হয়। সৃষ্টি হয় আলাদা বৈশিষ্ট্য।
 
এভাবে জন্ম নেওয়া পাখিরা বড় হয়ে আবার খাঁচাতেই ডিম পাড়ে। সেখানেই বাচ্চা দেয়। সে বাচ্চা ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয়। এদের খোলা পরিবেশে ছেড়ে দিলে ডিম দেয় না, বাঁচেও না বেশিদিন। অর্থাৎ খাঁচাতেই জন্ম, খাঁচাতেই মৃত্যু। খাঁচার জীবনে এরা পায় পুষ্টিকর খাবার, খড়কুটোর বাসা ও নির্দিষ্ট পরিবেশ।
 
জাতীয় প্রেসক্লাবে এমন ২শ প্রজাতির এক হাজার পাখি নিয়ে দু’দিনের একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ‘এভিকালচারাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ’।
খাঁচার পাখি- ছবি: কাশেম হারুন
শুক্রবার (০৬ জানুয়ারি) শেষদিন গিয়ে দেখা গেছে, মানুষের ভিড়। কেউ এসেছেন শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে, কেউবা স্বামী অথবা স্ত্রীকে নিয়ে। অনেক পাখিপ্রেমীও এসেছেন।
 
সবার চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। পাখি বলে কথা। তাও যদি হয় হরেক রকম রঙ, সাইজ আর জাতের- তবে তো আনন্দ না ধরারই কথা। সবাই যার যার পছন্দের পাখির সামনে যাচ্ছেন আর ছবি তুলছেন। সেলফিও নিচ্ছেন অনেকে। সব মিলিয়ে আয়োজক, দর্শনার্থী সবাই খুশি।
 
প্রদর্শনীতে ২শ প্রজাতির পাখি দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে আগতদের মধ্যে লাভ বার্ড, ম্যাকাউ, ককাটেল, লরি, হাজিবিগার, টারকুইসেন, কাকাতোয়া, কেনারি, কনিউর প্রজাতির পাখির প্রতি বেশি আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।
 
সারাদেশে এভিকালচার সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর ২শ ৩১ জন সদস্য রয়েছেন। যারা তাদের বাসাতেই এসব পাখির প্রজনন ও পরিপালন করে থাকেন। প্রদর্শনীতে কোনো পাখি বিক্রির জন্য রাখা না হলেও সদস্যরা তাদের বাড়িতে বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে এক জোড়া পাখি ৭শ ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা দাম রাখা হয়।
 
সংগঠনটির সহ-সভাপতি আখতারুজ্জামান মিরান বাংলানিউজকে বলেন, ‘খাঁচার পাখি খাঁচায় পুষুন, বনের পাখি বনে’ এই স্লোগান নিয়েই তারা কাজ করছেন। এক্ষেত্রে দেশীয় প্রজাতির পাখিকূল রক্ষা করতে তারা বিদেশ থেকে পাখি আনেন। সংকরায়ণ ঘটিয়ে সৃষ্টি করেন ভিন্ন ভিন্ন রঙের দৃষ্টিনন্দন পাখি। যা তাদের মূল প্রজাতির বৈশিষ্ট্য হারায়। এসব পাখি বনে বা খোলা পরিবেশে বাঁচে না। খাঁচাতেই এরা জন্ম নেয়, বড় হয়, ডিম দেয়, বাচ্চা দেয়। আবার খাঁচাতেই মৃত্যু ঘটে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৬
ইইউডি/এসআরএস/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।