ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ফেসবুক গ্রুপ নিয়ে দ্বন্দ্বে খুন হয় আদনান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৭
ফেসবুক গ্রুপ নিয়ে দ্বন্দ্বে খুন হয় আদনান

ঢাকা: ফেসবুকের দু’টি গ্রুপ গড়ে তোলে এলাকার কিশোররা। তারা নিজেদের গ্রুপ ভারী করতে অন্য সহপাঠীদের দলে টানতো। দল ভারী করা বা এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগত। শেষ পর্যন্ত এই দ্বন্দ্ব রূপ নেয় নৃশংসতায়। এক গ্রুপের সদস্যদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় অপর গ্রুপের সদস্য কিশোর আদনান কবির।

ট্রাস্ট কলেজের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ‍আদনান (১৪) ‘নাইটস্টার’ গ্রুপের সদস্য। নাইটস্টার গ্রুপের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গড়ে তোলা হয় ‘ডিসকো’ গ্রুপ।

শুক্রবার (০৬ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর উত্তরা ১৩নং সেক্টর ১৭নং রোডে ডিসকো গ্রুপের সদস্যরা হকিস্টিক ও চাপাতি নিয়ে আদনানের ওপর হামলা চালায়। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় আদনানকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার দিন রাতে আদনানের বাবা কবির হোসেন উত্তরা পশ্চিম থানায় নাইনস্টার গ্রুপের ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই দিন রাতেই নাসির মো. আলম (১৮) এবং সাদাফ জাকিরকে (১৬) গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন দুটি গ্রুপের কথা বেরিয়ে আসে।

উত্তরাপশ্চিম থানা সূত্র জানায়, এলাকার কিশোররা ফেসবুকের দুটি গ্রুপ গড়ে তোলে। কে কার দলে থাকবে বা যোগ দেবে এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হতো। গান-বাজনা, খেলাধুলাসহ এলাকায় কার আধিপত্য বিস্তার হবে এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল। আদনান খুন হওয়ার মাত্র তিন দিন আগেই দুই গ্রুপের মধ্যে একবার মারামারি হয়। এভাবে গত তিন মাসে নিজেদের মধ্যে ও অন্যদের সঙ্গে কয়েকবার সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রুপ।

তবে, আদনান কোনো গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিল না বলে দাবি করেছে স্বজনরা।  

আদনানের মামা জিয়াউল হক বাংলানিউজকে বলেন, আদনান কোনো গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিল না। এ বিষয়ে এখন অনেকেই বলাবলি করছেন। যারা আদনানকে খুন করেছে তারা হামলার আগে চাপাতি-হকিস্টিক নিয়ে ফেসবুকে ছবিও পোস্ট দিয়েছে। তাদের নামে থানায় বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। কিন্তু আদনানের নামে কোনো অভিযোগ নেই।

ঘটনার দিনের বর্ণনায় তিনি বলেন, আদনানসহ চার-পাঁচজন সেদিন মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলছিল। তারপর হঠাৎ করেই তারা সবার ওপরেই হামলা চালায়। আদনানের অন্য বন্ধুরা পালিয়ে যেতে পারলেও আদনান পালাতে পারেনি। হকিস্টিক ও চাপাতি দিয়ে আদনানকে আঘাত করে হামলাকারীরা। পেটে স্ক্রু ড্রাইভারও ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, সে মাইলস্টোন কলেজ থেকে জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে। তারপর নবম শ্রেণিতে ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি করা হয়। সে খুবই মেধাবী ছিল। এ বয়সে সবারই বন্ধু-বান্ধব থাকে। একসঙ্গে চলতে গেলে মনোমালিন্য হতেই পারে। কিন্তু বাচ্চা একটা ছেলেকে এত নির্মভাবে কীভাবে খুন করল? আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আর কোথাও যেন এমন ঘটনা না ঘটে।

শনিবার (০৭ জানুয়ারি) আদালতের নির্দেশে গ্রেফতার নাসির ও সাদাফকে একদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার ডিসকো গ্রুপের হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারায় নাইটস্টার গ্রুপের আদনান কবির। আমরা তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি। গ্রেফতারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী অন্য আসামিদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

নিহত আদনানের বাবা কবির হোসেন পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আদনান বাবা মায়ের সঙ্গে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর রোডে বাসায় থাকতেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৬

পিএম/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।