ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বনানীর আগুন

ভয়াবহতার থেকে বেশি ছিল ধোঁয়ার আতঙ্ক

জান্নাতুল ফেরদৌসী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৭
ভয়াবহতার থেকে বেশি ছিল ধোঁয়ার আতঙ্ক বনানীতে বসতি হরাইজন ভবনে আগুন

ঢাকা:‘অন্যদের চিৎকার শুনে দৌড়ে ৭ তলা থেকে ৬ তলায় নামার চেষ্টা করি। কিন্তু প্রবল ধোঁয়ার চোখ খোলা রাখতে পারছিলাম না। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো।’ রাজধানীর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের ২১ নাম্বার বসতি হরাইজন নামের ১৯ তলা ভবনে দুপুরে আগুনের ঘটনা ঘটে।

ওই আগুনের সময় প্রাণ বাঁচানোর গল্পটি এভাবেই বাংলানিউজকে বলছিলেন রাজু আহমেদ। তিনি ৭ তলায় ডাইনামিক ট্রাভেলস’র একজন কর্মকর্তা।

তখনও তার চোখগুলো লাল। ডান পাশের চোখের কোনায় আঘাতের চিহ্ন। কিন্তু আগুন থেকে যাওয়ায় এই আঘাত গায়েই লাগাচ্ছেন না। বললেন, ‘ধোঁয়ার মধ্যে হয়তো কোথাও গুতো লেগেছে। প্রাণটা বেঁচেছে এই তো অনেক। ’

আরো বললেন, ‘অনেক কষ্টে ৬ তলার ডান পাশের অফিসের বারান্দায় আশ্রয় নিতে পেরেছিলাম। পরে ক্রেন দিয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আমাকে উদ্ধার করে। ’

ওই ভবনে অবস্থিত পত্রিকা খোলা কাগজে কাজ করেন আরেকজন শামসুল আলম সেতু। তার বর্ণনা ছিলো আরো ভয়াবহ। ‘আগুনের কথা শুনেই নিচে নেমে দেখি ধোঁয়া, ওমনি দৌড় দিয়ে ছাদে উঠলাম। সেখানে মই ছিলো। মই দিয়ে পাশের বিল্ডিং এ নামার চেষ্টা করি। কিন্তু মইয়ের দৈর্ঘ্য পাশের বিল্ডিংয়ের ছাদ পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছিলো না। পরে জানালা রেলিং ধরে বেয়ে বেয়ে নেমেছি। ’

পাশের এক রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন মো. আসাদুল শেখ। প্রত্যক্ষভাবে আগুনের ঘটনাটি দেখেছিলেন এবং কয়েকজনকে উদ্ধার করেছিলেন তিনি। বললেন, ‘ভয়ে কিছু মানুষ জানালা দিয়া লাফ দিয়া নামছিলো। আবার ওই বিল্ডিং থেকে পাশের বিল্ডিং এ ২০ থেকে ৩০ জনকে বের করে আনছি। ’

ভবনের অন্যান্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, সম্ভবত ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরের ইলেক্ট্রিক সার্কিট বোর্ড থেকে শর্ট সার্কিট হয়। সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। বোর্ডের পাশে থাকা মোটরসাইকেলের পেট্রোলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে টক্সিক গ্যাস তৈরি হয়। ভবনে ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা না থাকায় সিঁড়ির দিক দিয়ে আগুন উপরের দিকে উঠে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আগুনের ভয়াবহতার থেকে বেশি ছিলো ধোঁয়ার আতঙ্ক।


এ রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট কাজ করে সেখানকার  আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় ১ জন মহিলাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) মেজর এ কে এম  শাকিল নেওয়াজ।

তিনি আরো জানান, কোটি কোটি টাকার বিল্ডিং করার সময় সেফটির বিষয়টি কেউ একবারও ভাবেন না। এই কারণেই এই ধরণের ঘটনায় পড়তে হয়। তবে ঘটনাটি আমরা সঠিক সময়ে জানতে পারি বলেই আমরা ভলোভাবে সবাইকে বের করে আনতে পেরেছি। ‘

সতর্কতার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়ে গেছে। তারপরেই আজকেও ধোঁয়ার কারণে ভয় পেয়ে অনেকে লাফ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছে। এটা মোটেও ঠিক হয়নি। ’

এ ধরনের ঘটনা বার বার হচ্ছে সেক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিসের কোন পদক্ষেপ রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন তদন্ত করে দেখছি কতগুলো ভবন এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। খুব দ্রুতই আমরা এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে সিলগালা করে দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছি। ’

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মো.ওয়াহিদ বলেন, ফায়ার সার্ভিস আমাদের বলেছেন এই ভবন বর্তমানে ঝুঁকিমুক্ত। তাই আইডি কার্ড দেখে ভবনের কর্মকর্তাদের আমরা ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৭
জেডএফ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।