দু’বছর আগে (২০১৪ সালের ০৩ নভেম্বর) জেলহত্যা দিবসে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন আশার কথাই জানিয়ে ছিলেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানের স্ত্রী জাহানারা জামান।
আজ তিনি নেই।
বেঁচে থাকার যুদ্ধে লড়েছে গেছেন একাই। সন্তানদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। স্বামী হত্যার বিচারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে বুকের মধ্যে চাপা অভিমান নিয়ে সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) না ফেরার দেশে চলে গেলেন মহিয়সী এই নারী।
তার বড়ছেলে রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ছোটছেলে এএইচএম এহসানুজ্জামান ও চার মেয়েকেই এখন সেই ব্যথা বহন করতে হবে।
সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানের সহধর্মিনী জাহানারা জামান জানিয়েছিলেন, দীর্ঘদিনের এ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তার অনেক হতাশার কথা।
১৯৭৫ সালের ০৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতার অন্যতম রাজশাহীর এএইচএম কামরুজ্জামানকেও হত্যা করা হয়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় ১৯৭৫ সালের ২৩ আগস্ট ধানমন্ডির সরকারি বাসভবন থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
এরপর আর ফেরা হয়নি তার। সেসময় ছেলেরা বিদেশে থাকায় দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে নিঃসঙ্গ দিন কাটাতে হয় শহীদ স্ত্রী জাহানারা জামানকে।
৭৫’র সেই ভয়াবহ দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে জাহানারা জামান জানিয়েছিলেন, ০২ নভেম্বর রাতে ঢাকা কারাগারে গোলাগুলির খবর শুনে আঁতকে ওঠেন তিনি। অজানা শঙ্কা মনের মধ্যে এই নৃশংসতার কথা বার বার কুঠারাঘাত করছিল। কিন্তু কোনোভাবেই জানতে পারছিলেন না, ঠিক কী ঘটছে।
চারিদিকেই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। শেষে এক কান-দু’কান করে জানতে পারেন, তার স্বামী কামরুজ্জামান শহীদ হয়েছেন। সঙ্গে অন্য তিন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে কারা প্রকোষ্ঠেই। সেইসব দুঃসহ স্মৃতি সারাটি জীবন তাকে কাঁদিয়ে বেড়িয়েছে।
তার বুকের মধ্যে অনেক কষ্ট চেপে ছিলো জগদ্বল পাথরের মতো। তাই সেইসব শত্রুদের পতন দেখে যেতে না পারলে হয়তো মরেও শান্তি পাবেন না বলে জানিয়েছিলেন।
আশার কথা শুনিয়ে বলেছিলেন, এতো দিন পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং রায় বাস্তবায়ন হয়েছে। একের পর এক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। বর্তমান সরকার যা করছে অতীতে কোনো সরকার তা করতে পারেনি। তাই এ সরকারই পারবে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত চার সহচরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার ও রায় বাস্তবায়ন করতে।
দাবি করেছিলেন, একই স্থানে জাতীয় চার নেতার সমাধিস্থল করার।
আজ সব আশা, আকাঙ্ক্ষা আর দাবিগুলো থেকে গেছে। কেবল তিনি নেই!
ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, তার মা বেঁচে থাকতে নৃশংসতম জেলহত্যার বিচার দেখে যেতে পারলেন না।
এটা তাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে শেষ পর্যন্ত বিচার হলে, খুনিদের ফাঁসি কার্যকর হলে হয়তো তার মায়ের আত্মা শান্তি পাবে।
**শহীদ কামরুজ্জামানের স্ত্রী আর নেই
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭
এসএস/এএটি/এসএনএস