ঢাকা, বুধবার, ০ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

জেলহত্যার বিচার দেখে যেতে পারলেন না জাহানারা জামান

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৭
জেলহত্যার বিচার দেখে যেতে পারলেন না জাহানারা জামান শহীদ কামরুজ্জামান ও তার সহধর্মিনী জাহানারা জামান

রাজশাহী: ‘নভেম্বর মাস এলেই কষ্টগুলো বাড়ে। স্মৃতি তাড়া করে। সেদিনের বিভৎসতার চিত্র মনে হলে এখনও আঁতকে ওঠি। বিগত বিএনপি সরকার বিচারের নামে কেবল প্রহসন করেছে। কলুষিত করেছে স্বাধীনতার ইতিহাসকে। তবে আমি আশাবাদী, জেলহত্যার বিচার দেখে যেতে পারবো। হয়তো সেজন্যই সৃষ্টিকর্তা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’

দু’বছর আগে (২০১৪ সালের ০৩ নভেম্বর) জেলহত্যা দিবসে বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন আশার কথাই জানিয়ে ছিলেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানের স্ত্রী জাহানারা জামান।

আজ তিনি নেই।

যুগের পর যুগ ধরে জেলহত্যার বিচার দেখার জন্য এভাবেই অপেক্ষা করছিলেন শহীদ কামরুজ্জামানের সহধর্মিনী। স্বামী দেশের জন্য শহীদ হওয়ার পর চরম সঙ্কট মুহূর্তেও তিনি ভেঙে পড়েননি। বহু চড়াই-উৎরাই পার করে জীবন সংগ্রামে জয়ী হয়েছেন।

বেঁচে থাকার যুদ্ধে লড়েছে গেছেন একাই। সন্তানদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। স্বামী হত্যার বিচারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে বুকের মধ্যে চাপা অভিমান নিয়ে সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) না ফেরার দেশে চলে গেলেন মহিয়সী এই নারী।

তার বড়ছেলে রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ছোটছেলে এএইচএম এহসানুজ্জামান ও চার মেয়েকেই এখন সেই ব্যথা বহন করতে হবে।

সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানের সহধর্মিনী জাহানারা জামান জানিয়েছিলেন, দীর্ঘদিনের এ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তার অনেক হতাশার কথা।

১৯৭৫ সালের ০৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতার অন্যতম রাজশাহীর এএইচএম কামরুজ্জামানকেও হত্যা করা হয়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সময় ১৯৭৫ সালের ২৩ আগস্ট ধানমন্ডির সরকারি বাসভবন থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

এরপর আর ফেরা হয়নি তার। সেসময় ছেলেরা বিদেশে থাকায় দুঃসহ যন্ত্রণার মধ্যে নিঃসঙ্গ দিন কাটাতে হয় শহীদ স্ত্রী জাহানারা জামানকে।

৭৫’র সেই ভয়াবহ দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে জাহানারা জামান জানিয়েছিলেন, ০২ নভেম্বর রাতে ঢাকা কারাগারে গোলাগুলির খবর শুনে আঁতকে ওঠেন তিনি। অজানা শঙ্কা মনের মধ্যে এই নৃশংসতার কথা বার বার কুঠারাঘাত করছিল। কিন্তু কোনোভাবেই জানতে পারছিলেন না, ঠিক কী ঘটছে।

চারিদিকেই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। শেষে এক কান-দু’কান করে জানতে পারেন, তার স্বামী কামরুজ্জামান শহীদ হয়েছেন। সঙ্গে অন্য তিন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে কারা প্রকোষ্ঠেই। সেইসব দুঃসহ স্মৃতি সারাটি জীবন তাকে কাঁদিয়ে বেড়িয়েছে।

তার বুকের মধ্যে অনেক কষ্ট চেপে ছিলো জগদ্বল পাথরের মতো। তাই সেইসব শত্রুদের পতন দেখে যেতে না পারলে হয়তো মরেও শান্তি পাবেন না বলে জানিয়েছিলেন।

আশার কথা শুনিয়ে বলেছিলেন, এতো দিন পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং রায় বাস্তবায়ন হয়েছে। একের পর এক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। বর্তমান সরকার যা করছে অতীতে কোনো সরকার তা করতে পারেনি। তাই এ সরকারই পারবে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত চার সহচরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার ও রায় বাস্তবায়ন করতে।

দাবি করেছিলেন, একই স্থানে জাতীয় চার নেতার সমাধিস্থল করার।

আজ সব আশা, আকাঙ্ক্ষা আর দাবিগুলো থেকে গেছে। কেবল তিনি নেই!

ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, তার মা বেঁচে থাকতে নৃশংসতম জেলহত্যার বিচার দেখে যেতে পারলেন না।

এটা তাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে শেষ পর্যন্ত বিচার হলে, খুনিদের ফাঁসি কার্যকর হলে হয়তো তার মায়ের আত্মা শান্তি পাবে।

**শহীদ কামরুজ্জামানের স্ত্রী আর নেই

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭
এসএস/এএটি/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।