রোববার (০৫ ফেব্রুয়ারি) দিনগত গভীররাতে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কুমির লালনপালনের একটি কৃত্রিম পুকুরে (প্যান) চিতা বিড়ালটি ঢুকলে সেটিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এদিকে, কুমির ছানা হারানো ও হত্যার ঘটনায় নজরদারির সময় চিতা বিড়ালটিকে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে স্বীকার করেছে বন বিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম সোমবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, তিন দফায় ৬০টি কুমির ছানা হত্যা ও নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। এর পর গত রাত থেকে কুমির প্রজনন কেন্দ্রে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া কুমিরের প্যানগুলোর ভেতরে ও বাইরে ক্যামেরা সেট করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গভীররাতে একটি চিতা বিড়াল প্যানে ঢুকে পড়ে। ক্যামেরায় দেখা যায়, বিড়ালটি প্যানে ঢুকে আগের রাতে হত্যা করা কুমিরের ছানাগুলো খাচ্ছে। বিষয়টি বন কর্মীদের নজরে আসার পর বিড়ালটিকে আটকের চেষ্টা করে তারা। বিড়ালটি ধরতে না পেরে পরে সেটিকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
চিতা বিড়ালটিকে হত্যার পর ময়নাতদন্তের জন্য সকালে খুলনায় পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, ডিএফও জানান, বিড়ালটি দুই থেকে আড়াই ফুট লম্বা হবে।
উইকিপিডিয়া বলছে, চিতা বিড়ালের ইংরেজি নাম Leopard cat এবং বৈজ্ঞানিক নাম Prionailurus bengalensis. স্তন্যপায়ী প্রাণী চিতা বিড়াল মূলত আকারে প্রায় পোষা বিড়ালের সমান।
২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী চিতা বিড়াল একটি সংরক্ষিত প্রজাতি।
সংরক্ষিত প্রজাতির প্রাণী হিসেবে আইনের ৬ ধারা মোতাবেক বন্যপ্রাণীটি শিকার করা নিষিদ্ধ। এছাড়া প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিকারে সহায়তা বা এমন অপরাধ করতে প্ররোচিত করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
প্রসঙ্গত, ২৯ জানুয়ারি ও ৩০ জানুয়ারি কেন্দ্রের দু’টি প্যান থেকে ৪৩টি কুমিরর ছানা নিখোঁজ হয়। যার মধ্যে মৃত অবস্থায় ছয়টি, দু’টি লেজ ও একটি মাথা পাওয়া যায়। এর পর ৫ ফেব্রুয়ারি ১৪টি কুমির ছানার মৃতদেহ, দু’টি লেজসহ ১৭টি কুমির ছানা হত্যার কথা জানায় বন বিভাগ।
প্রথমে দুই দফায় কুমির ছানাগুলো নিখোঁজের পর শিয়াল বা বন বিড়াল এগুলোকে নিয়ে গেছে বলে প্রচার করা হয়। পরে বন বিভাগ দাবি করে, দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্বের জেরে বাচ্চাগুলোকে হত্যা করা হয়েছে।
পরে করমজল কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বনকর্মী (লস্কর) মাহাবুব হোসেনের মধ্যে দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করে লস্কর মাহাবুব হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে বন বিভাগ। এছাড়া চাকরিচ্যুত করা হয় চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী জাকির হোসেনকে।
সর্বশেষ চিতা বিড়াল হত্যার মাধ্যমে ৬০টি কুমির ছানা নিখোঁজ ও হত্যার জন্য বিড়ালটিকে অভিযুক্ত করছে বন বিভাগ। তবে, ছোট একটি চিতা বিড়াল তিন রাতে এতোগুলো কুমির ছানা হত্যা করেছে বলে বন বিভাগের সবশেষ অনুমানটি হাস্যকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৬
এজি/এসআই