বাঁকের কারণে অনেক ঘুরে ঘুরে পরিবহণ চলাচল করে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে। যাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেশি।
সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে রয়েছে ২৩টি বিপদজ্জনক বাঁক। যার প্রায় সবগুলোই সোজা করে সড়ক টেনে দেওয়া হবে।
দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়, ‘হেমায়েতপুর-সিংগাইর ও মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মানে ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মহাসড়কের বাঁকগুরো সোজা করার পাশাপাশি ঢাকা-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে একটি বিকল্প সড়ক তৈরির কর্মসূচীও রয়েছে। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এবিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘হেমায়েতপুর-সিংগাইর ও মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মানে ও প্রশস্ততায় বাড়ানো হবে। আর একটি বিকল্প সড়কও তৈরি হবে। এই অংশে সমস্ত বাঁক সংকোচন করা হবে। এতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক নিরাপদ হওয়ার পাশাপাশি কমবে ১২ কিলোমিটার দূরত্ত্ব।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পুরোটা জুড়েই একের পর এক স্বর্পিল বাঁক রয়েছে। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ঘিওর উপজেলায় জোকা এলাকায় এই সড়কে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও প্রখ্যাত সাংবাদিক ও ভিডিওগ্রাফার মিশুক মুনীর।
এছাড়াও ২০১০ সালের ৩১ জুলাই মানিকগঞ্জের শিবালয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় একই সঙ্গে নিহত হন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা। এরা ছিলেন—মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রাজিয়া বেগম এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার (বিসিক) চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান।
এছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই এই সড়ক থেকে দুর্ঘটনার খবর আসে। ঘন ঘন বাঁকের কারণে দুর্ঘটনা নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মহাসড়কে। কিছু কিছু স্থানে বাঁক সংস্কার করা হলেও কমছে না দুর্ঘটনা।
সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের হেমায়েতপুর-সিংগাইর ও মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ঝুঁকিপূর্ণ। এই সড়কের ৩১ দশমিক ০৭ কিলোমিটার সড়কে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এই ৩১ কিলোমিটার সড়কে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হবে। ফলে পুরো সড়কই হবে নিরাপদ।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এই উদ্যোগ। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ জানিয়েছে, পাশাপাশি ফোরলেনেও রুপান্তর করা হবে সড়কটিকে।
বাঁক সংকোচনে ৬ দশমিক ২০ একর ভূমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি সাড়ে ৬ লাখ ঘন মিটার মাটির কাজও করা হবে বলে জানায় সূত্র। এছাড়াও প্রায় এক কিলোমিটার নতুন ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট, ২৬ কিলোমিটার সড়ক পেভমেন্ট প্রশস্তকরণ, দেড় কিলোমিটার পেভমেন্ট মজবুতিকরণ ও সাড়ে ২৭ কিলোমিটার সার্ফেসিং করা হবে।
আরও রয়েছে সাড়ে তিন কিলোমিটার ইউটার্ন ড্রেন, ছয় কিলোমিটার আরসিসি সসার ড্রেন ও আড়াই কিলোমিটার আরসিসি ক্রস ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ।
সড়ক নিরাপদ করতে ১৫ মিটারের আটটি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণেরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পুরো সড়কে ২৭৬ কোটি টাকা খরচ হবে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছে সূত্র।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সরেজমিন ঘুরে উথলী, টেপড়া, জোকা, মহাদেবপুর, বানিয়াজুড়ি ও মুন্নুসিরামিক গেইটে নামক স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক দেখা গেছে। তবে এই স্থানের বাঁকগুলোতে ডিভাইডার দেয়া হয়েছে। তবে সে ডিভাইডারেও কমছে না সড়কের ঝুঁকি ।
এছাড়াও সতর্কবাণী সংবলিত সাইনবোর্ড দেয়া রয়েছে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে। তবে তাতেও ভ্রুক্ষেপ নেই চালকদের। ফলে সড়কটি নিরাপদ করতেই সরকার এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে, বলেন এম এ এন ছিদ্দিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭
এমঅাইএস/এমএমকে