বর্তমানে রাজধানীর রাস্তায় প্রতিদিনই এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। রাস্তায় হাঁটার সময় বা গাড়িতে যাওয়ার সময় এখন অনেকেই কানে হেডফোন ব্যবহার করেন।
কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দীপা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় যানজটে বসে থাকলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। তাই হেডফোন ব্যবহার করে কখনও গান শুনি। আবার যেহেতু যানজটের সময় চারপাশে অনেক শব্দ থাকে তাই কারো সঙ্গে কথা বলার সময়ও হেডফোন ব্যবহার করি। সময়টা পার করা আর কি। ’
বাড্ডা লিংকরোড এলাকায় কথা হয় ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউওডিএ) ছাত্র সাজিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় যানজটে পড়লে হেডফোন দিয়ে গান শোনা বা মুভি দেখা হয়। কেউ ফেসবুক চালায়, কেউ গেমসও খেলে। এছাড়া তো আর কিছুই করার নেই আমাদের। ’
তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে আমার ক্যাম্পাসে যেতে সময় লাগার কথা ৩০ মিনিট। মাঝে মাঝে সেখানে লেগে যায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এই সময়টাতে কি করবো আমরা। সে সময়টা মোবাইলই আমাদের ভরসা। যানজটের কারণে কিছুটা হলেও এসবের ব্যবহার বাড়ছে। ’
কানে হেডফোন ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান এএফ মহিউদ্দিন খানের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘কানে হেডফোন ব্যবহারের সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। সাধারণত আমাদের কান ৮৫ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ সহনীয়। যা বেশিরভাগ হেডফোন ব্যবহারকারীরা জানেনই না। ’
তিনি বলেন, ‘হেডফোনের যথাযথ ব্যবহারের সুবিধা দুটি। বাইরের শব্দ কানের ভেতরে আসতে দেয় না আর যে শব্দটা যিনি শোনে সেটা কমফোরটেবললি শুনতে পারেন। আর অসুবিধাটা হচ্ছে যদি কেউ যথাযথভাবে ব্যবহার না করে তাহলে হেয়ারিং লস হবে। যানজটে সাধারণত গড়ে ৯০ ডেসিবেলের মতো শব্দ থাকে। তাই যানজটে বসে কেউ হেডফোন ব্যবহার করলে তাকে ৯০ এর বেশি ডেসিবেল শব্দ ব্যবহার করতে হবে এটাই স্বাভাবিক। এভাবে যদি কেউ তিন থেকে চার ঘণ্টা হেডফোন ব্যবহার করেন তাহলে হেয়ারিং লস হবে। আর এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তার সম্পূর্ণ হেয়ারিং লস হবে এবং এই হেয়ারিং লস কোনো চিকিৎসায় ভালো হবে না। ’
তিনি আরও বলেন, ‘হেয়ার লস দুই ধরনের আছে। একটা হলো হেয়ার লস হলেও কোনো নার্ভ সেল নষ্ট হয় না। এটা চিকিৎসা দিলে ভালো হয়। আর নার্ভ নষ্ট হয়ে গেলে সেটির কোনো চিকিৎসা নেই। তাই আমরা যানজটের সময় যদি হেডফোন লাগিয়ে বেশি শব্দ দিয়ে গান শুনি তাহলে বুঝতে হবে আমরা নিজেরাই নিজেদের কান নষ্ট করছি। ’
স্বাভাবিকভাবেও কেউ হেডফোনে গান শুনলে তার পাশেরজনের কানেও যদি সেই শব্দ যায়, তাহলে বুঝতে হবে উচ্চমাত্রায় শব্দ ব্যবহার হচ্ছে। আর এই উচ্চামাত্রার শব্দই হেয়ারিংয়ের নার্ভসেল নষ্টে করে যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করলেও একসঙ্গে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট হেডফেন ব্যবহার করা যাবে। একসঙ্গে এর বেশি সময় ব্যবহার করা যাবে না। ১৫ মিনিট পর রেস্ট দিতে হবে। এছাড়া অনেক সময় একসঙ্গে থাকলে পাশেরজনের সঙ্গে হেডফোন শেয়ার করেন অনেকে। এটা করা যাবে না। সেক্ষেত্রে তার কানে কোনো ইনফেকশন থাকলে সেই ব্যাকটেরিয়া অন্যজনের কানে চলে যাবে। এতে কানে সংক্রমণ হতে পারে। তাই একজনের হেডফোন আরেকজনের একদমই ব্যবহার করা যাবে না।
তাই হেডফোন ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন যোগ করেন মহিউদ্দিন খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭
এমএইচকে/আরআর/বিএস