ঢাকা, বুধবার, ১ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অয়েল ট্যাঙ্কারের নামে পুরনো কেমিকেল ট্যাঙ্কার কিনছে বিএসসি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৭
অয়েল ট্যাঙ্কারের নামে পুরনো কেমিকেল ট্যাঙ্কার কিনছে বিএসসি!

ঢাকা: এসটিএস (শিপ টু শিপ) কার্গো অপারেশনের জন্য ক্রুড অয়েল ট্যাঙ্কারের নামে ২৮৬ কোটি টাকায় (ভ্যাট-ট্যাক্স মিলিয়ে ৩২৮ কোটি) পুরনো কেমিকেল ট্যাঙ্কার কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএসসি (বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন)। যেটি দিয়ে শিপ টু শিপ কার্গো অপারেশন অসম্ভব। 

কোনো প্রকার দরপত্র ছাড়াই ডিএমপি (ডিরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড) প্রক্রিয়ায় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড থেকে এই পুরনো জাহাজটি কিনতে যাচ্ছে বিএসসি। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পারচেজ কমিটির বৈঠকে এমভি ফুল স্টার কেনার প্রস্তাব পাস হলেই লাভ লক কোম্পানি থেকে জাহাজটি কেনা হবে।

এদিকে, এই জাহাজ কেনাকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

বিএসসি সূত্র জানায়, এসটিএস কার্গো অপারেশনে ফেন্ডার নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্তত দুটি ক্রেন জাহাজে থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ এমভি ফুল স্টার জাহাজটিতে আছে মাত্র একটি। যে ক্রেন দিয়ে কার্গো অপারেশন করা অসম্ভব। ফলে এই জাহাজ দিয়ে চট্টগ্রামের বহিঃনোঙ্গরের মাদার ভেসেল থেকে তেল খালাস করা যাবে না। দুটি জাহাজ একত্রিত হয়ে লাইটার অপারেশন করাও সম্ভব নয়।

আইএমও (ইন্টারন্যাশনাল ম্যারিটাইম অর্গানাইজেশন) এর নিয়ম অনুযায়ী ক্রুড অয়েল ট্যাঙ্কারে ভ্যালাস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থাকা বাধ্যতামূলক হলেও এমভি ফুল স্টারে তা নেই। শুধু তাই নয়, জাহাজটিতে নেই কোনো ক্রুড অয়েল ওয়াশিং সিস্টেমও। জাহাজটির ডেকে ও ইঞ্জিনরুমে অনেক যন্ত্রাংশ পুরনো। ফাটা রয়েছে অনেক পাইপ লাইনও।  

এমভি ফুল স্টার’র কাঠামোগত সঠিক বাজারমূল্য আন্তর্জাতিক ব্রোকারদের মতে ২০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ১৬০ কোটি টাকার বেশি নয়। কিন্তু এই জাহাজ কেন ৩২৮ কোটি টাকায় কেনার প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।  

পিপিআর ২০০৮ অনুযায়ী, ডিপিএম প্রক্রিয়ায় কোনো কিছু কিনতে হলে অবশ্যই নৌযান ইন্সপেকশন ও নেগোসিয়েশন কমিটি থাকতে হবে। কিন্তু এই জাহাজ কেনার প্রক্রিয়ায় এ ধরনের কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি বলে বিএসসি থেকে জানা গেছে।  

২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পুরনো জাহাজ কেনার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে ১৫টি দেশে কমার্শিয়াল অপারেশন চালিয়েছে এমভি ফুল স্টার। যেকারণে এমভি ফুল স্টার কেনার প্রক্রিয়া নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছেন নৌ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।  

নৌ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিএসসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়াকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি পরিদর্শক কমিটি জাহাজটি পরিদর্শন করেছে। কমিটির অন্য দু’জন সদস্য হলেন- বিএসসি’র জেনারেল ম্যানেজার (শিপ রিপেয়ার) আবু হেলাল সিদ্দিকী ও ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং এর ইঞ্জিনিয়ার ড. এস এম নাজমুল হক।  

উক্ত কমিটি এম ভি ফুল স্টার সম্পর্কিত যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে জাহাজটি সম্পর্কে অনেক তথ্য এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- এসটিএস কার্গো অপারেশন করতে অপারগ এমভি ফুল স্টার, জাহাজে ভ্যালাস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট না থাকা, ক্রুড অয়েল ওয়াশিং না থাকাসহ আরও অনেক কিছু।  

নৌ-সচিব অশোক মাধব রায় বাংলানিউজকে বলেন, আমরা পুরনো কোনো জাহাজ কিনবো না। এম ভি ফুল স্টার নিয়ে আমি এর চেয়ে বেশি কিছু আপাতত বলতে পারছি না।  

মেরিন ট্রাফিক নামে একটি আন্তর্জাতিক ওয়েব সাইটে উল্লেখ রয়েছে, এমভি ফুল স্টার ২০১৫ সালে তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে জাহাজটি ১৫টি দেশে কমার্শিয়াল অপারেশন চালিয়েছে। জাহাজটির ওজন ২১ হাজার ৬৭৮ টন। জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮৮ দশমিক ২ মিটার ও প্রস্থ ২৯ মিটার।  

তবে, এসব নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ বিএসসি’র উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা।  

এসব বিষয়ে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বাংলানিউজকে বলেন, এম ভি ফুল স্টার এর বয়স এক বছরের কিছু বেশি। আমাদের সম্পূর্ণ নতুন জাহাজ কেনার যথেষ্ট টাকা নেই। তাই আমরা পুরনো জাহাজ কেনার বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছি। আর আমাদের জানা মতে, এমভি ফুল স্টারের কাঠামোগত অবস্থা সন্তোষজনক। তবে, পরিদর্শনকারী কমিটি যে তথ্য গোপন করেছে সে বিষয়ে আমি অবগত নই। যদি এ বিষয়ে আমরা কোনো অভিযোগ পাই, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭
ইউএম/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।