ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মাঘ ১৪৩১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

মাঘের গোধুলিতে সূর্য দর্শন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
মাঘের গোধুলিতে সূর্য দর্শন গোধূলীর সূর্য

ফেনী নদী ঘুরে:  দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি ভুলে মাঘের স্নিগ্ধ বিকেলের ফেনী শহর থেকে সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী সেচ প্রকল্প। ভাঙাচোরা গ্রাম সড়ক হয়ে যখন ফেনী নদীতে পৌঁছাই, ততক্ষণে গোধুলি লগ্ন। রাস্তার কারণে যাত্রাপথের তিক্ত অভিজ্ঞতায় এরই মধ্যে চরম বিরক্ত।

তবে, ফেনী নদীতে পশ্চিমাকাশে সদ্য ডুবতে যাওয়া লাল স‍ূর্যটাকে দেখে তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলতে সময় লাগেনি। গোধুলি লগ্নে সূর্য‍াস্তের এই অপূর্ব দৃশ্য যাত্রাপথের ক্লান্তি মুছে শরীর এক মূহুর্তেই ঝরঝরে হয়ে ওঠে।

নদীর ধারে শিরীষ গাছের ডালের ফাঁক গলে উঁকি দেওয়া রক্তিম সূর্যটা বুকের ভেতর অদ্ভুত ভালো লাগা সৃষ্টি করে। ভাটার টানে নদীতে ভেসে ওঠা বালির স্তরে স্তরে সূর্যাস্তের আলো চিকচিক করে ওঠে। দিগন্তে ডুবতে থাকা এ সূর্য নদীর পানিতে পড়ে রক্তিম রঙ ধারণ করে মোহনীয় দৃশ্যের অবতারণা ঘটেছে। এদিকে রোমাঞ্চিত দৃশ্যগুলো ধরে রাখতে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ক্লিক সহকর্মীদের।

বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা। এ জেলায় নৈসর্গিক শোভা ও মনোমুগ্ধকর অসংখ্য দৃশ্য বিদ্যমান। এর মধ্যে সোনাগাজী উপজেলার সেচ প্রকল্প ও পারিপার্শ্বিক প্রাকৃতিক- নৈসর্গিক সৌন্দর্য মণ্ডিত ফেনী নদী অন্যতম।

ফেনী নদী বেষ্টিত এলাকায় মুহুরী সেচ প্রকল্প। এ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত হয়েছে স্লুইচ গেট। স্লুইচ গেট থেকে নদীর এক পাশে তাকালে চোখে পড়ে সাগরের জোয়ার-ভাটার টান। শেষ বিকেলে ভাটার টানে নদীতে বালি জমেছে। দূর থেকে যা দেখতে চোরাবালির মতো। সেই ভেজাবালি স্তরের ওপর সাদা বকের ওড়াউড়ি।

গোধূলীর সূর্যঅপর অংশে চোখে পড়ে কচুরিপানায় ভরা নদীর পানি। নদীর দুই পাড়ে সাজানো সারি সারি ইঞ্জিনচালিত ও মাছ ধরার নৌকা। প্রতিদিন ফেনীসহ দূর-দূরন্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ নৌকায় ঘুরতে আসে উত্তাল ফেনী নদীতে। ঘুরে বেড়ানো নৌকাগুলো পযর্টকদের জন্য বিভিন্ন রঙের কাপড় দিয়ে সাজানো। পর্যটকদের চিত্ত বিনোদনের জন্য নৌকায় রয়েছে সাউন্ড সিস্টেম। দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে ছোট বাজার ও বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যে, এক সময় সাগরের মতো বিশাল ছিলো ফেনী নদী। নদীর দুইপাড় ছিলো সবুজে ঘেরা ধু ধু প্রান্তর। আশির দশকে ফেনী নদীকে ঘিরে মুহুরী সেচ প্রকল্প শুরু হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে নদীটি ছোট হয়ে আসে। তবে প্রকল্পকে ঘিরে শুরু হয় উপকূলের মানুষের স্বপ্ন দেখা।

প্রকল্পের অধীনে নদীর উপর নির্মিত ৪০টি গেটবিশিষ্ট রেগুলেটর ও ক্লোজার ড্যামটি (স্লইচ গেট) দেখতেও আকর্ষণীয়। সবুজঘেরা নদীর দুই পাড়ের সৌন্দর্য, সূর্যাস্ত উপভোগ ও নদীতে ঘুরতে শীত মৌসুমে বহু দেশি-বিদেশি পর্যটক ও পিকনিক পার্টির আগমন ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাসান জানান, শীত ঋতুতে অতিথি পাখির আগমন ও তাদের কলকাকলি প্রকল্প এলাকার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। যা ঘুরতে আসা মানুষকে মুগ্ধ করে। প্রতিদিন অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসে। ফেনী থেকে আসার রাস্তাটি মেরামত করা উচিত। সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে ফেনী নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠা এই প্রজেক্ট পযর্টকদের আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে রুপ লাভ করবে- বলে জানান হাসান।

আগুন রাঙা রঙ ছড়িয়ে পশ্চিমাকাশে সূর্য বিদায় নিলে, চারদিক থেকে ঘনিয়ে আসে সন্ধ্যের আঁধার। দোকানগুলোতে জ্বলে ওঠে বৈদ্যুতিক বাতি। প্রায় আধা ঘণ্টার ভালো লাগার আবেশে ফেনী সদরে যাওয়ার সময় মায়াবী ফেনী নদী দেখলে জোয়ারের টানে বালির স্তর পানিতে ঢেকে যেতে দেখা যায়।

গোধূলী লগনযেভাবে যাবেন মুহুরী সেচ প্রকল্প: মুহুরী সেচ প্রকল্প যেতে ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে বেশ কষ্ট পোহাতে হবে। এখান থেকে সরাসরি কোনোও পরিবহন নেই। ফেনী লালপোল থেকে মিল্লাত পরিবহন, ফারাবি ট্রান্সপোর্ট, জয় পরিবহন, প্রতিশ্রুতি পরিবহনের বাসে সোনাগাজী উপজেলা সদর পর্যন্ত। এরপর সোনাগাজী উপজেলা সদর থেকে বাসে চেপে বাদামতলী পর্যন্ত। বাদামতলী থেকে রিকশায় দর্শনীয় স্থানে পৌঁছানো যায়।

এছাড়া ফেনী মহিপাল মোড় থেকে সিএনজি অটোরিকশায় দর্শনীয় স্থানে যাওয়া যায়। তবে, ভাড়া গুণতে হবে ২০০/২৫০ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৭
এমসি/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।