ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নদী কেড়ে নিল ভিটে, এবার আগুনে গেল শেষ সম্বল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭
নদী কেড়ে নিল ভিটে, এবার আগুনে গেল শেষ সম্বল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পোড়া ঘরের কাছে বিলাপ করছেন কোহিনূর বেগম-ছবি-রীনা আক্তার তুলি

ঢাকা: বছর কয়েক আগে স্বামীকে হারিয়েছেন কোহিনূর। শত অভাবের মধ্যেও একমাত্র সন্তান শান্তকে নিয়ে চলছিল বেঁচে থাকার লড়াই। কিন্তু ১০ মিনিটের আগুনে ঘর পুড়ে ছাই। পুড়েছে স্বামীর দেওয়া শেষ স্মৃতি চিহ্নও।

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চাঁন মিয়া হাউজিং বস্তির পোড়া ঘরের কাছে বিলাপ করতে করতে এসব কথা জানান কোহিনূর বেগম।
 
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ৩টার দিকে আগুনে ১০৮টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে জানান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন।

 

তবে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে বস্তিতে গেলে বস্তির লোকজন দাবি করেন, আগুনে বস্তির প্রায় দেড় শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে বিলাপ করছেন ঘরের মালিকরা। পুড়ে যাওয়া ঘরের মধ্যে কোহিনূরের দু’টি ঘর ছিল।
 
কাহিনূরের বাড়ি বরিশালের ভোলায়। তিনি বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালান। পুরো বস্তিতে পুড়ে যাওয়া কাঠ, টিন সরাচ্ছেন বস্তিবাসী। বাতাসে শুধু পোড়া গন্ধ। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নিচে নিজেদের শেষ সম্বল হারিয়ে হতবাকের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছেন। খাবার ও পুরান কাপড়ের আশায় বসে থাকতেও দেখা যায় গেছে বিপন্ন এই মানুষগুলোকে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পোড়া ঘর-ছবি-রীনা আক্তার তুলি
 দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নিম্ন আয়ের মানুষজনের কিছু অংশের ঠাঁই মেলে মোহাম্মদপুরের চাঁন মিয়া হাউজিংয়ের এই বস্তিতে। আগুনে সর্বস্বান্ত হয়ে তারা নিরূপায় অবস্থায় সময় পার করছেন।
 
কোহিনূর বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগুনে সব পুড়ে গেছে। পরনের কাপড়া ছাড়া কিছুই নাই। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুর সবটাই পুড়ে গেছে। আগুন পথের ফকির বানিয়ে দিয়েছে। ’

প্রায় ৩০ বছর আগে নদীভাঙ্গনে স্বামীর ভিটেবাড়ি হারিয়েছেন কহিনূর। বছর কয়েক আগে স্বামী কামরুলে মিয়াকেও হারিয়েছেন। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে চলছিল বেঁচে থাকার লড়াই। তা-ও শেষ হয়ে গেল। বিলাপ করতে করতে জানান কোহিনূর।
 
কোহিনূর আরো বলেন, ‘স্বামীর দেওয়া শেষ স্মৃতি-চিহ্ন ছিল হাতের একটি বালা। অনেক অভাবের মধ্যেও তা বিক্রি করিনি। কিন্তু আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে গেল। ’
 
কোহিনূরের অভিযোগ, বস্তিতে আগুন লাগানো হয়েছে উচ্ছেদ করার জন্য। সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ’ঘরে আমার প্রায় ৮০ হাজার টাকার মালপত্র ছিল। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে, তবে আবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবো। ’

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পোড়া ঘরের কাছে বিলাপ করছেন বাসিন্দারা-ছবি-রীনা আক্তার তুলি
 কোহিনূরের মতো একই অভিযোগ এই বস্তির সেতারা, হাসিনা ও ইউনূস মিয়ার। তারা বাংলানিউকে বলেন, রাতে  ‘আগুন আগুন’ চিৎকার শুনে তারা ঘরে থেকে বের হয়ে আসেন। পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই বের করতে পারেননি। এই আগুনে তাদের প্রত্যেকের প্রায় ১ লাখ টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
 
তাদের অভিযোগ, উচ্ছেদের জন্যই আগুন লাগানো হয়েছে। সরকার যদি সহযোগিতা করলে তারা আবার নতুন করে ঘর ওঠাতে চান।  
 
গত বুধবার দিনগত রাত ৩টার দিকে আগুন লাগে। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭
আরএটি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।