দিনে গাছের সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখা হয় আর রাতে ঘরের চৌকির সঙ্গে। এভাবেই কাটছে হানিফের (১৪) শৈশব।
প্রায় তিন বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটছে হানিফের। মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে আর দশটা শিশুর মতো প্রাণোচ্ছ্বল শৈশব পায়নি। বাবা মারা যাওয়ার পর হানিফের চিকিৎসা করাতে পারেনি তার পরিবার। বড় সন্তানের দুশ্চিন্তায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় দিন কাটছে মা শেফালী বেগমের (৩৫)।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠাল ইউনিয়নের বিলবুকা (চরপাড়া) গ্রামের হানিফের পরিবার জানায়, ৬ মাস বয়সে তার আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। তার বাবা কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করালেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। বছর তিনেক আগে গাজীপুরের চৌরাস্তায় ছিনতাইকারীদের হাতে মারা যান সালাম। এরপর বন্ধ হয়ে যায় হানিফের চিকিৎসা।
হানিফসহ আরও দুই সন্তান বৃষ্টি (৯) ও ইয়াছিনকে (৩) নিয়ে মানবেতর দিনযাপন করছেন শেফালী। সম্পদ বলতে ভিটে-মাটি ছাড়া আর কিছুই নেই।
প্রতিবেশী আবুল কালাম (৪৫) বাংলানিউজকে জানান, ছোটবেলা থেকেই প্রতিবেশীদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় হানিফ। নিরুপায় হয়ে শেফালী তিন বছর ধরে তার পায়ে শিকল দিয়ে রেখেছেন।
শেফালী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ওর বাবা মারা যাওয়ার পর পুরোপুরি চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখি’।
হানিফের চাচী সুমা বেগম বলেন, ‘হানিফের মাথায় সমস্যা আছে। গাছের পাতার দিকে তার ধ্যান বেশি। হাতে গাছের পাতা পেলে সাময়িকভাবে তার চিৎকার, কান্না থামে’।
চিকিৎসার অভাবে আর পুষ্টিহীনতায় কঙ্কালসার শরীর হানিফের। শেফালী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘গরিব বলে আমাদের ভাগ্যই খারাপ। নয়তো ওর বাবা বেঁচে থাকলে এভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরতে হতো না’।
তিনি বলেন, ‘কেউ আমার ছেলের চিকিৎসায় যদি এগিয়ে আসতেন, তবে ও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারতো। আর দশটা শিশুর মতো হেসে খেলে বেড়াতো’।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু জাফর রিপন বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
এমএএএম/আরআর/এএসআর