কাছাকাছি যেতেই শোনা গেল, পরিষ্কার বাংলায় স্কাউটের এক ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, কি রে হিরু, ভালো করে ফুল সাজাও!
বিদেশি কোনো নাগরিকের মুখে স্পষ্ট বাংলা শুনে উপস্থিত সবাই তো অবাক। পরে জানা গেল, এই বিদেশির নাম ফাদার জিওয়া।
ফাদার জিওয়া প্রথম এদেশে এসেছিলেন ১৯৯৫ সালে। খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও দরিদ্র তরুণ-তরুণীদের স্বাবলম্বী করার জন্য বাংলাদেশে আগমন তার। প্রথমবার এসেই এদেশের প্রেমে পড়ে যান। এ দেশের সহজ-সরল মানুষকে নিয়ে কাজ করারও তাগিদ অনুভব করেন। বাংলাদেশ ও এদেশের মানুষকে জানতে প্রয়োজন পড়ে বাংলা ভাষা শেখার।
তবে ওই সময় কয়েকবার ধাপে ধাপে আসলেও ২০০৬ সালের পর স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। ৯৫ সালে বরিশালে বাংলা ভাষার উপর একটা কোর্স করেন। বর্তমানে মোহাম্মদপুরে থাকেন তিনি।
প্রতি বছরের মতো এবারও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন ফাদার জিওয়া।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে ঘুরে ঘুরে দেখছেন ফুলে ফুলে সাজানো বেদী। যাকেই পাচ্ছেন তার উদ্দেশে বলছেন, কেমন আছিস?
বিদেশির মুখে প্রাণের বাংলা ভাষা- তাই উত্তর দিতে অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে জড়িয়ে ধরছেন, হ্যান্ডশেক করছেন। অবশ্য এমন আবেগের প্রকাশ আজকের দিনটার কারণেও। এই দিনে দেশের বীর সন্তানেরা বাংলা ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ভাষার জন্য আত্মত্যাগের নজির ইতিহাসে বিরল। তাই তো এই ভাষা কোনো বিদেশির মুখে শুনলে পুলকিত হয়ে ওঠে চিত্ত।
ফাদার জিওয়া বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে বাংলা ভাষা শিখেছি। এই ভাষা আমাকে প্রচণ্ড টানে। ইতালিয়ান ভাষা আমার কাছে যতটা প্রিয় বাংলা ভাষাও ততটাই প্রিয়।
‘আজকের দিনে এই ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের জন্য আমি গর্বিত। আমি প্রতি বছর শহীদ ভাইদের শ্রদ্ধা জানাতে এখানে আসি। বাংলাদেশকে আমি ভালোবাসি। ইতালি আমার প্রথম দেশ, বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় দেশ। এই ভাষায় কথা বলতে আমি মজা পাই।
২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা উচিৎ বলেও মনে করেন এই ভিনদেশি।
ফাদার জিওয়ার বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার প্রতি এ প্রেমে তরুণ অর্ক বিমোহিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমার দেশ। বাংলা আমার মাতৃভাষা। একুশ আমার চেতনা। আর এগুলোর প্রতি কোনো বিদেশির আকর্ষণ আমাকে গর্বিত করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭
এমসি/আরআর/বিএস