ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

গ্রামেও শহীদ দিবসে উদ্দীপনা

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭
গ্রামেও শহীদ দিবসে উদ্দীপনা গ্রামেও শহীদ দিবসে উদ্দীপনা

ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) ঘুরে এসে: শহর কি গ্রাম কোনো প্রভেদ নেই। সর্বত্রই সমান উদ্দীপনা ও একই আবেগ।

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার গ্রামগুলোতে এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে।

উপজেলার দশমাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একুশে ফেব্রুয়ারির আগের দিনেই বিদ্যালয়টির শহীদ মিনার সেজে উঠে।

আল্পনার আচরের পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনের ছবিও শোভা পায়।

খুব সকালেই মাইকে বেজে উঠে ভাই হারা একুশের সেই ঐতিহাসিক গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। ’

প্রভাত ফেরী না হলেও ফুলে ফুলে ভরে ওঠে এ শহীদ মিনার। গ্রামের এ শহীদ মিনারে রাতে যারা ফুল দিয়েছেন তারা শুধু আশেপাশের গ্রামের লোকজনই নন। ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও।

এখানে রক্তের দামে কেনা লাল-সবুজের পতাকা অর্ধনমিত রাখার সচেতনতা দৃশ্যমান।

শিক্ষাঙ্গণকে শহীদ মিনারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন করেছিল, প্রাণ দিয়েছিলো, এমন কথাও জানে এ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি পাস করা কোমলমতি শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহম্মেদ শাওন (১২) ও রীতা আক্তার (১১)।

তাদের ভাষ্যে, রফিক, জব্বারসহ নাম না জানা শহীদদের রক্তের বিনিময়েই আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলছি। এ বীর শহীদদের জন্য আমাদের অশ্রুতে সিক্ত হয় শহীদ মিনারের প্রতিটি ফুল।
গ্রামেও শহীদ দিবসে উদ্দীপনা
‘একুশ মানে মাথা নত না করা। একুশ বাঙালির শক্তি। বাঙালির সমৃদ্ধ হওয়ার দিন একুশে ফেব্রুয়ারি’ একুশের তাৎপর্য শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরে আলোচনা সভায় বলছিলেন এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোর্শেদা খাতুন।

তিনি এও বলছিলেন, দেশপ্রেমিক চেতনার পাঠশালা হচ্ছে শহীদ মিনার।

প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শ্রবণ করছিলেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। যখন তিনি বলতে থাকলেন ‘ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু’- তখন ছোট মনে যেন এঁকে দিলো কষ্টের চিত্রকল্প।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান সরকারও। তিনি বলেন, ‘এমন একটা সময় ছিল, যখন গ্রামে কোনো শহীদ মিনার ছিল না। একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই কাঠ বা কলাগাছ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি হতো। সবার বুকে কালো ফিতা সেপটিপিন দিয়ে আটকানো থাকতো’।

তিনি বলেন, ‘এখন গ্রামে গ্রামে শহীদ মিনার হয়েছে। যেখানেই স্কুল সেখানে শহীদ মিনার। এমন একটি ইউনিয়ন নেই যেখানে শহীদ মিনার নেই। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার ঐতিহ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশিষ্ট্য। এখন তরুণ প্রজন্ম চেতনার লাল মশালে উজ্জীবিত। ’  

শহীদ মিনার শুধু ভাষা শহীদদের স্মৃতি নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর কেন্দ্র বলয়। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে সমবেত হওয়ার এ কেন্দ্র পবিত্র ও মর্যাদার।

শহীদ মিনারের অমর্যাদা কোনো দেশপ্রেমিক সচেতন মানুষ সহ্য করে না, বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে এমন মন্ত্রই বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের।

অবিস্মরণীয় একুশে ফেব্রুয়ারি রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস। এ দিনটিকে ঘিরে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দৌড় প্রতিযোগিতা, বিস্কুট দৌড়, মোরগ লড়াইসহ নানা রকমের খেলাধুলা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭
এমএএএম/জিপি/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।