একজন বাংলাদেশি শ্রমিক জানালেন, এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাস্তা কাটা হয় মধ্যরাতে। একটি মেশিন রয়েছে মাটি কেটে সঙ্গে সঙ্গে কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে তুলে দিচ্ছে।
যে কারণে কুয়ালালামপুর সিটিকে রাস্তার কাজ হলেও নোংরা হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। এক কাপড়ে সপ্তাহ চালিয়ে নেওয়া যায় অনায়াসে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অবস্থা পুরোই বিপরীত। সারা বছর জুড়েই থাকে রাস্তার খোঁড়াখুড়ি। আর যেখানে রাস্তার কাজ চলে সেদিক দিয়ে যাতায়াত করা খানিকটা চৌত্র মাসে চাষের জমি দিয়ে যাতায়াত করার মতো!
শুধু কুয়ালালামপুর সিটিতে নয়। মালাক্কা সিটিতেও একই পদ্ধতিতে কাজ করতে দেখা গেলো (১৬ ফেব্রুয়ারি)। জালান বেন্দাহারায় হোটেল ভেলিয়ান্টের বিপরীতে একটি ফুটপাতের সংস্কার কাজ চলছিল তখন। তার পাশেই একটি ট্রাক দাঁড় করানো। মাটি কেটে সঙ্গে সঙ্গে সেই ট্রাকে তোলা হচ্ছে, রাস্তার ওপর স্তূপ করা হচ্ছে না।
আর বাংলাদেশে কি হচ্ছে। মৌচাকে পাইলিংয়ের জন্য রাস্তা খোঁড়া হয় দুই বছর আগে। সেখানে পাইলিং শেষ হয়েছে বছর দেড়েক আগেই। পাইলিংয়ের ওপর উঠেছে কলাম, কলামে বসেছে গার্ডারও। কোথাও কোথাও গার্ডারের ওপর স্প্যানও বসেছে।
অথচ পাইলিংয়ের জন্য তোলা মাটিগুলো এখনও সরানো হয় নি। ধুলিকনা বাতাসের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। আবার কখন বৃষ্টির সঙ্গে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এভাবে বাতাস ও বৃষ্টির পানিতে মিশতে মিশতে ছোট হয়ে এসেছে ফরচুন শপিং মলের সামনের স্তূপটি। তবুও সরাবার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
রোদ থাকলে ধুলোয় অন্ধকার। আবার বৃষ্টি হলে কাদায় একাকার, এই অবস্থা এখন নিত্য দিনের চিত্র। এই পথ দিয়ে একবার গেলে, খুব বিপদে না পড়লে আর কেউ এই পথ মাড়াতে চান না। কিন্তু যাদের বাসা কিংবা অফিস এই এলাকায় তারা রয়েছেন মহাবিপদে। তাদের কাছে গলার কাঁটার মতো অবস্থা। না পারছেন গিলতে, না পারছেন ফেলতে।
স্থানীয়রা আশায় ছিলেন, ২০১৫ সালে কাজ শেষ হলে মুক্তি পাবেন। কিন্তু দফায় দফায় সময় বাড়ানো হচ্ছে। বলা হয়েছিল ২০১৬ সালে শেষ হবে। কিন্তু তারপরও দেড় মাস অতিবাহিত হলেও খুব একটা অগ্রগতি নেই। কবে শেষ হবে তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।
একই অবস্থা ছিল যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের কাজ চলাকালেও। নতুন করে শুরু হওয়া মেট্রো রেলের কাজের ক্ষেত্রেও মিরপুরে একই অবস্থা। ওয়াসা, কিংবা বিদ্যুতের খোঁড়াখুড়ি তো আছেই। রাস্তা খুঁড়ে মাটি তোলা হলেও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না রামপুরায় ও মগবাজারে।
মাটি কেটে তোলার পর মাসের পর মাস স্তূপ করে রাখা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে হাওয়ার সঙ্গে মিলিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও অর্ধেক কেটেই ফেলে রাখা হচ্ছে সপ্তাহের পর সপ্তাহ। এমনকি ড্রেন পরিষ্কার করেও সপ্তাহ জুড়ে রাস্তার ওপর জমিয়ে রাখা হচ্ছে ময়লা।
এই ময়লা বাতাসের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে নগর জুড়ে। মুখে মাস্ক কিংবা চশমা পরেও আর রক্ষে হচ্ছে না। চশমার গ্লাসের ফাঁক দিয়ে চোখের ভেতর পৌঁছে যাচ্ছে ধুলিকনা। আবার রাস্তায় চলার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলতে গেলেও ধুলোবালি মুখের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। বাইক চালকদের অভিজ্ঞতা খুবই তিক্ত। কাদায় একাকার হয়ে যাচ্ছে শরীর। একদিন ব্যবহারের পরেই ময়লা হয়ে যাচ্ছে কাপড়।
আমরা কি পারি না মালয়েশিয়ার মতো রাস্তা খুঁড়ে সঙ্গে সঙ্গে মাটি সরিয়ে ফেলতে। বসবাসের অযোগ্য সিটির তালিকায় উঠে এসেছে ঢাকার নাম। এ অবস্থা থাকলে ভবিষ্যতে আরও অবনতির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ এই ঢাকা সিটির নামের আগে এক সময় তিলোত্তমা ব্যবহৃত হতো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
এসআই/পিসি