কিন্তু না, এই আরবি কৌশলেও ঠেকানো যাচ্ছে না যেখানে-সেখানে মূত্রত্যাগ। ‘হুনা মামনু আততাবুল’র বাংলা অর্থ ‘এখানে প্রসাব করা নিষেধ’।
কেন এই কৌশলও কাজে আসছে না? স্পষ্ট হয়ে উঠছে অভ্যাস, অনীহা এবং অনিচ্ছার কথা। যদিও রাজধানীতে পাবলিক টয়লেটের অভাব এ সমস্যার প্রধান কারণ বলে অস্বীকার করে না দুই সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাতের কোণে, ফুটওভার ব্রিজের নিচে এমনকি পার্কের ভেতরে মূত্রত্যাগ করছেন অনেকে। আশেপাশে পাবলিক টয়লেট থাকা স্বত্ত্বেও কেবলই অলসতা বা অনাগ্রহের কারণে কাণ্ডজ্ঞানহীন এ আচরণ করছেন তারা। কেউ কেউ ‘সময় বাচাঁনো’রও দোহাই দেন অবশ্য।
রাজধানীর বাংলামোটর থেকে কারওয়ান বাজারমুখী সড়কটির বাম পাশের পার্কের কোণায় দাঁড়িয়ে প্রয়োজন সারলেন আরিফ কবির (ছদ্মনাম)। এরপর আবার ভদ্রলোকটি সেজে হাঁটা ধরলেন সামনে। অথচ সেখানটায় দেয়ালে আরবি অক্ষরে মূত্রত্যাগ না করার নির্দেশনা।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাথা চুলকে আরিফের উত্তর, “আমি তো উপরের দিকে তাকিয়ে করেছি। আরবি অক্ষর দেখি নাই। তাছাড়া অক্ষরগুলো অস্পষ্ট হওয়ায় বোঝাও যাচ্ছে না। ”
ফার্মগেটের পার্কের ভেতরেও দেখা গেলো একই চিত্র। পার্কের দেয়াল ঘেঁষে প্রাকৃতিক কাজ সারলেন কয়েকজন কলেজে শিক্ষার্থী। অথচ পাশেই বড় অত্যাধুনিক টয়লেট। দৃষ্টি আকর্ষণে তাদের একজন বললেন, “টয়লেটে যাইতে হলে তো অনেকটা পথ ঘুরে আসতে হতো। এ রাস্তায় হাটছিলাম। চাপ এলো, তাই...!”
মহাখালীর আমতলী তিতুমীর কলেজের মূল ফটকের সামনে ফুটওভার ব্রিজের নিচের অবস্থা একপ্রকার শোচনীয়। দেয়ালের কোণা থেকে ‘মানুষের রুচিশীলতা’ উপচে রাস্তায় গড়িয়ে পড়ছে। ফলে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে চারপাশে। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অনেকের বমি করার দশা হয়।
সেখানে কথা হচ্ছিল পথচারী মিশু সাওদিয়ার (ছদ্মনাম) সঙ্গে। তিনি বলেন, “শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এক্ষেত্রে সমান রুচির। অনেকে ২-৫ টাকা বাঁচানোর জন্যও নিজের রুচিশীলতাকে এভাবে বিসর্জন দেন। ”
ফুটওভার ব্রিজের নিচের একটি কনফেকশনারী দোকানের জনৈক কর্মী বলেন, “এমন গন্ধে কাস্টমারও কম আসে। তাই প্রতিদিনই ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করতে হয়। এর আগে এখানে দড়ি বেঁধে তার সঙ্গে জুতা ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। কোনো কাজ হয়নি। ”
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) তথ্য মতে, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ ও সিটি কর্পোরেশনের যৌথ প্রচেষ্টায় ঢাকা উত্তরে মোট ১০টি অত্যাধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে তেজগাঁওয়ে ৩টি, নাবিস্কোতে ১টি, ফার্মগেটে ১টি, গাবতলীতে ১টি, মিরপুর চিরিয়াখানায় ১টি রয়েছে। আরও ১০টির কাজ নির্মাণাধীন। ওয়ার্ল্ড টয়লেট অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় আরও ১০টি টয়লেট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) অধীনে আরও একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা পরবর্তী একনেকে অনুমোদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৭৩টি টয়লেট নির্মাণের টার্গেট রয়েছে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির ১৮ নং ওয়ার্ডের (নর্দা, কালাচাঁদপুর, বারিধারা, শাহজাদপুর) কাউন্সিলর মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আসলে মূল সমস্যা আমাদের নিজেদের। আমরা কেউই সচেতন নই। আগে আমাদের যথেষ্ট টয়লেট ছিল না। কিন্তু এখন বিভিন্ন স্থানে পাবলিক টয়লেট হয়েছে। লোকজন সেটার ব্যবহার করছে না বা করতে শিখছে না। এখন কেবল টয়লেট ব্যবহারে সচেতনতা এবং নির্দেশনা প্রয়োজন। আগামী বোর্ড মিটিংয়ে এ বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।
৩১ নং ওয়ার্ড (মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া) কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান বলেন, মেয়রের নেতৃত্বে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি ঢাকা সিটিকে পরিচ্ছন্ন করার। এই সমস্যাও সমাধান হবে। তবে এসবই সময়সাপেক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির সুপারিন্টেডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (জলবায়ু, পরিবেশ) ড. তারিক বিন ইউসুফ বাংলানিউজকে বলেন, এখনও জনগণের চাহিদা অনুযায়ী টয়লেট অপ্রতুল। কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সাধারণ জনগণকে দিতে হবে। সেজন্য আমাদের বিভন্ন পরিকল্পনা রয়েছে, সেসব বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি।
পর্যাপ্ত টয়লেট নির্মাণ করতে পারলে এই সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
জেডএফ/এইচএ/