ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

২৩ ফেব্রুয়ারি জেলা বাগেরহাটের যাত্রা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
২৩ ফেব্রুয়ারি জেলা বাগেরহাটের যাত্রা দেশে-বিদেশে বাগেরহাটের পরিচিতি ‘ষাটগম্বুজ মসজিদে’র শহর হিসেবেও

বাগেরহাট: বাগেরহাট, সুন্দরবন ঘেষা দেশের দক্ষিণের জনপদ। কেবল সুন্দরবনই নয়, ‘ঐতিহাসিক মসজিদের শহর’ হিসেবেও সুখ্যাতি এ জেলার। দেশে-বিদেশে বাগেরহাটের পরিচিতি ‘ষাটগম্বুজ মসজিদে’র শহর হিসেবেও।

ষাটগম্বুজ কেবল মসজিদ নয়। হযরত খানজাহানের (রহ.) নির্মিত ঐতিহাসিক এ স্থাপনাটি মসজিদের পাশাপাশি ব্যবহৃত হতো খলিফাতাবাদের দরবার হল হিসেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস প্রকাশিত বিশ্বের হারিয়ে যাওয়া ১৫টি ঐতিহাসিক শহরের তালিকায় রয়েছে এ ‘খলিফাতাবাদ’ শহরের কথা। ‘ঐতিহাসিক মসজিদের শহর বাগেরহাট’ হিসেবে খানজাহানের নির্মিত খলিফাতাবাদ শহরের টিকে থাকা নিদর্শনগুলোকে ১৯৮৫ সালে ‘সাংস্কৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ইউনেস্কো।

বাগেরহাটের আরেক গর্ব সুন্দরবন। কেবল বাঘের জন্যই নয়, নদী বেষ্টিত এ বনে কুমির, হরিণসহ হাজারও প্রাণিকূলের বাস। জীববৈচিত্রের অপার সম্ভার সুন্দরবন বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত। সম্প্রতি সরকার বাগেরহাটকে ব্র্যান্ডিং করেছে ‘সবুজ বাগেরহাট, সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার’ হিসেবে।

প্রাকৃতিকভাবে দুর্যোগ প্রবন এলাকা হিসেবে পরিচিত উপকূলীয় এ জেলার সবুজ বেষ্টনিও বলা হয় সুন্দরবনকে। এক সময় পুরো বাগেরহাট অঞ্চল ছিল সুন্দরবনের অংশ।

ধারণা করা হয়, অনার্য অর্থাৎ ভারত বর্ষের লোক এসে এ অঞ্চলে প্রথম বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসা অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় এবং মঙ্গোলীয় আলপাইনরা আসে এ অঞ্চলে। ইতিহাসবিদদের মতে, ভারত উপমহাদেশের আদিমতম অধিবাসীরা বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে এসে এখানে বসবাস শুরু করেন।

প্রাচীন এ জনপদে বৈদ্ধ্য সভ্যতারও বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয় ১২শ’-১৩শ’ খ্রিষ্টাব্দের আগ পর্যন্ত এ অঞ্চলে বৈদ্ধ্য সভ্যতা ছিলো। পরবর্তীতে বিকাশ ঘটে হিন্দু সভ্যতার।

খ্রিষ্টীয় ১৫শ' শতকে সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহের আমলে হয়রত খানজাহান (রহ.) নামে পরিচিত খান-উল-আযম উলুঘ খানজাহান এখানে খলিফাতাবাদ নগরের রাজধানী স্থাপন করেন। ষাটগম্বুজ এবং খানজাহানের এ খলিফাতাবাদকে কেন্দ্র করে বর্তমান শহর বাগেরহাটের গোড়াপত্তন।

১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ নভেম্বর ‘মোরেল-রহিমুল্লাহ’ নামক এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ (নীল বিদ্রোহ) হয় মোরেলগঞ্জে। সে সময় সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন খুলনার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। এর পর প্রশাসনিক প্রয়োজনে বাগেরহাটে একটি মহকুমা স্থাপন করার সুপারিশ করেন তিনি।

এ সুপারিশের সূত্রে ১৮৬৩ সালে বাগেরহাট যশোর জেলার অন্তর্গত একটি মহকুমায় রূপান্তরিত হয়। ১৮৮২ সালে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট মহকুমা নিয়ে গঠিত হয় খুলনা জেলা।

আর বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৮৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেলার মর্যাদা পায় বাগেরহাট।

বর্তমান বাগেরহাটের ৯টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা ও ৭৫টি ইউনিয়ন।

১৯৫০ সালে পহেলা ডিসেম্বর জেলার মংলায় প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। মংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে মংলা উপজেলা জুড়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্প কারখানা।

১৯৫৮ সালে ১ এপ্রিল শহর বাগেরহাট পৌরসভা হয়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে বাগেরহাট এগিয়েছে অনেকখানি। তবে সে অর্থে বিনিয়োগের অভাবে কাঙ্খিত উন্নতি হয়নি বাগেরহাটে। হয়নি তেমন কোনো রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা। বন, পরিবেশ, প্রত্নতত্ত্বকে বাঁচিয়ে রেখে শিল্পে সমৃদ্ধির জন্য দরকার রাষ্ট্রীয় নীতির। দেশের রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে রেল যোগাযোগ নেই বাগেরহাটে। তবে আশার কথা মংলা-খুলনা রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

পদ্মা নদীতে নির্মাণ হচ্ছে সেতু। যা মংলা বন্দরকে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। কৃষি, শিল্প, পর্যটন সব সম্ভাবনা নিয়ে বাগেরহাট এখন নতুন দিগন্ত।

২৩ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট জেলা প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছর। নীল বিদ্রোহ, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের সৃষ্টির প্রতিটি ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আজকের বাগেরহাটের নবযাত্রার সময়। প্রত্যাশা সমৃদ্ধ বাগেরহাট হবে আগামীর বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ট জেলা।

বাংলাদেশ সময়: ০২০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
এমএন/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।