আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ির জন্য থেকে থেকে হাউমাউ কান্না আর বিলাপ মোহাম্মদ শাহ-আলমের। ২৮০ নম্বর হোল্ডিং বাড়ির মালিক তিনি।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর বুড়িগঙ্গার পাড়ে ইসলামবাগ এলাকার প্লাস্টিক কারখানা ও বসতবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজনের মৃত্যু হয়। আর দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
তারা হলেন, শামীম হোসেন (৩২) ও তার স্ত্রী সীমা আক্তার (২৭) এবং খালাতো বোন সালেহা বেগম (৩৫)। মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হয়েছে হাসপাতাল মর্গে।
রাতে সরেজমিনে ইসলামবাগের সেই ইটাওয়ালাঘাট নামক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জীবনের শেষ সম্বল হারিয়ে বিলাপ করছেন বাড়ি ও কারখানা হারানো মানুষগুলো। আগুনে পুড়ে গেছে ২০টির মতো ঘর এবং অন্তত ১০টি কারখানা। পড়ে রয়েছে পুড়ে যাওয়া কাঠ, ইট, বাঁশ ও প্লাস্টিকের টুকরো। পুরো জায়গাটিতে কেবল পোড়া মাটির গন্ধ।
এছাড়া ঘর পুড়ে সর্বশান্ত কিছু লোক আশ্রয় নিয়েছেন আশ-পাশের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। অন্যরা তারা ছাড়া অন্যদের ঠাঁই খোলা আকাশের নিচে।
পুরো স্থানটি ঘুরে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো ছিল ইট ও টিনের তৈরি। প্রায় সব বাড়ির নিচেই কারখানা। এছাড়া বাড়ি ছাড়া আলাদা কারখানাগুলো ছিল গিঞ্জি টঙ ঘর আকৃতির। একটির সঙ্গে আরেকটি গা ঘেঁসে লাগানো।
মালিক মোহাম্মদ শাহ-আলম বাংলানিউজকে জানান, আগুন সব কেড়ে নিলো। ওই তিনতলা বাড়ি ছিল তার। বাড়ির নিচে তিনটি কারখানা ছিল। ক্ষতি তাদেরও তো কম নয়। আর বাড়ি-ঘর সবই ছিল যা এখন অতীতই বটে।
পরিবারে কথা তুলে ধরে কান্না জড়িতকণ্ঠ তিনি বলেন, আমার পরিবারে সদস্য ১০ জন। সবাই না খেয়ে আছে, চোখের সামনে আগুন সব কাড়লো; কিছুই করতে পারলাম না।
নিঃস্ব হয়েছেন, কারখানার মালিক আব্দুর রহিম ও মো. আবদুল্লাহ। তাদের দু’জনের দু’টি প্লাস্টিকের কারখানা ছিল।
তারা বাংলানিউজকে বলেন, আগুনে সব পুইড়া গেছে। ছাই ছাড়া কিছু নাই। আগুন আমগো পথের ফকির বানাইয়া দিছে।
এ বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম-অর-রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, কারখানা ও বাড়ি মিলে প্রায় ১০টির মতো অবকাঠামো হবে। বেশিরভাগ কারখানা বাড়ির নিচে, আর গিঞ্জি হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। অগ্নিকাণ্ডে আরও নিঃস্ব হয়েছেন কোহিনূর। তিনি প্লাস্টিক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। বসে ছিলেন মাথায় হাত দিয়ে। প্রতিদিনের মতোই এদিনও সকালে কাজের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। আর বাড়ি ফেরা হলো না; কাল থেকে কী করবেন কাজ! কে দেবে মজুরি বা বেতনটুকু!
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কারখানার বাইরে গেছিলাম; আগুনের খবর শুনে আইয়া দেহি ঘর পুইড়া ছাই। পরনের কাপড়া ছাড়া কিছু নাই... বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭
আরএটি/এএটি/
**ইসলামবাগে আগুনে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু