অল্প বয়সে মা হওয়ার ধকল, নিজের ও সন্তানের খরচ চালাতে আজ লিপি অনেকটাই মানসিক রোগী। জীবন চলে ভিক্ষা করে, মাঝে মধ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ড-গাঁজার পুরিয়া বেঁচে।
নানা পশ্চাৎপদতাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে নারী সমাজ। বেড়েছে কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ। এমনকি কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলে সচেতন নারী নিজ উদ্যোগে প্রতিবাদ করার পাশাপাশি পাশে পাচ্ছে নারী সংগঠনগুলোকে। তবে নারীর এই অগ্রযাত্রায় সুবিধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিত নারী।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও অশিক্ষিত লিপির মতো উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে নারীরা এখনও পিছিয়ে। নারী সংগঠন বা সরকার কাউকে পাশে পায় না এসব নির্যাতিত নারীরা। তাই, যৌন নির্যাতন, প্রতারণা ও অধিকার হরণকে অনেকটা নিয়তি হিসেবেই মেনে নেন তারা।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৪ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকাতে প্রায় ১০ লাখ নারী বস্তিতে বসাবাস করে। এছাড়া রয়েছে ৫০ হাজার মানুষ ভাসমান, এরমধ্যে অর্ধেকই নারী। এসব নারীর অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে যৌন নির্যাতন ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
অশিক্ষিত, অসচেতনতার কারণে নির্যাতিত এসব নারীরা জানেন না কোথায় গেলে এর প্রতিকার পাওয়া যাবে। সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্নবিত্ত এসব নারীদের প্রতি এনজিও ও সরকারের নারী উন্নয়ন সংস্থাগুলোর আগ্রহ কম থাকায়, অজনায় থেকে যাচ্ছে তাদের দুঃখ-কষ্টের কাহিনী।
আগারগাঁও বস্তির জাহানারা। ১৫ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। এক ছেলে হওয়ার পর তার স্বামী পালিয়ে যান। ময়মনসিংহে গিয়ে আরেকটা বিয়ে করেন। সেই থেকে মানুষের বাসায় কাজ করে তিনি সংসার চালান। তবে অল্প বয়সে স্বামী চলে যাওয়ায় তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।
জাহানারা বলেন, ‘পুত হইছে, বেটা পালাইছে। মা হইয়া তো ছেলে ফ্যালায় দিতে পারি না। বুকত আগলায় বাঁচি আছি। ’
তৌহিদা নামে এক নারী বাংলানিউজকে বলেন, ‘গুলিস্তানে ঝালমুড়ির দোকানদারকে বিয়ে করছিলাম। হেই দিনে তিনবার পিটায়। প্রায় সময়ে শরীর অসুস্থ থাকে। হের লাইগ্যা, বেটারে ছাইড়্যা দিছি। তবে মাঝে মধ্যে আগারগাঁও আইস্যা ঝগড়া-ঝাটি করে। এর বিচার করার মতো কাউরে পাই না। ’
নারী সংগঠনগুলোর দাবি, প্রতারণা বা নির্যাতনের শিকার হয়ে তাদের কাছে আসলে সমস্যার প্রতিকার করার চেষ্টা ও সাহায্য করা হয়। তবে নির্যাতিত নারীর কাছে গিয়ে সাহায্য দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের এনজিওগুলোর এখনও হয়নি। এজন্য সরকারকে এগিয়ে আসার তাগিদ দেন তারা।
এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক নুর খান বাংলানিউজকে বলেন, এখনও সব নারীরা ঘরে-বাইরে নির্যাতিত হচ্ছে। তবে ভাসমান ও বস্তিবাসী নারীদের অবস্থা ভারনারেবল। কেউ আইনী সহায়তা চাইলে প্রতিকারের চেষ্টা করি, তবে ধরে ধরে সহায়তা করতে পারি না। অনেক এনজিও এসব নারীদের নিয়ে কাজ করছে। আসলে বাংলাদেশের এনজিওগুলোর এখনও সামর্থ্য হয়নি সুবিধা বঞ্চিতদের সহায়তা করার।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বাংলানিউজকে বলেন, ভাসমান ও বস্তি বা নিম্নবিত্ত নারীরা নির্যাতিত হলে নিজে উদ্যোগী হয়ে কিছু করতে পারে না। এজন্য শিক্ষা ও অসচেতনতাই দায়ী। আমরা সংগঠন থেকে তাদের সচেতন করার উদ্যোগ নেই। কিছু কিছু তরুণ-তরুণী নিজেদের উদ্যোগে তাদের নিয়ে কাজ করছে। আমি মনে করি, শ্রমজীবী নারী সংগঠন ও আইনী সহায়তা যারা দেয় তাদের আরও এগিয়ে আসা উচিত।
এদিকে, সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, সমাজের অশিক্ষিত-অসচেতন নারীদের ব্যাপারে বরাবর আগ্রহ কম নারী সংগঠনগুলোর। তবে তাদের উচিত সমাজে সম্বনয় করে সুবিধা বঞ্চিত নারীদের নিয়েও কাজ করা।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৩ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৭
এমসি/এনটি