ঢাকা, রবিবার, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

আনোয়ারার সেদিন-এদিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৭
আনোয়ারার সেদিন-এদিন আনোয়ারার সেদিন-এদিন

ঢাকা: আনোয়ারা বেগম (৪৫)। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ। দুই ছেলে এক মেয়ের জননী তিনি। শাহবাগে ফুল বিক্রি করা তার বর্তমান পেশা।

জীবনযুদ্ধে হেরে মানুষদের মধ্যেকার মানুষ আনোয়ারা। নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে আজও টিকে আছেন এই যান্ত্রিক নগরীতে।

২০ বছর আগের কথা। ঘর, জমি, ভিটে-মাটি সব ছিলো আনোয়ারার। যাকে এক কথায় বলা যায় সোনার সংসার। কিন্তু সেই সোনার সংসারে বাধ সাধে স্বামী আব্দুল বারেকের অসুস্থতা। একদিকে যক্ষ্মা, একদিকে হাঁপানী। এ ঔষুধ, সে ঔষুধ। এ পরীক্ষা, সে পরীক্ষা। টাকা খরচ হয় পানির মতো। একমাত্র ভিটের ছোট্ট জায়গা ছাড়া বিক্রি করতে হয় সব জমি। স্বামী কিছুটা সুস্থ হলেও তিনি কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। তিন সন্তানকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতে থাকেন আনোয়ারা।

এক প্রতিবেশির উপদেশে আনোয়ারা ঢাকা এসে প্রথমে বাসা বাড়িতে কাজ শুরু করেন। থাকতেন বস্তিতে। কাজ না থাকলে অনেক রাত কাটিয়েছেন রাস্তায়। তারপর কাজ শুরু করেন ভবন তৈরির শ্রমিক হিসেবে। কিন্তু মজুরির অর্ধেকই নিয়ে যেত কাজের সরর্দার। বাকিটা দিয়ে কোনো রকম খাওয়ার খরচটা উঠতো বৈকী। ধীরে ধীরে তিনি নিজেই কাজ যোগাড় করেন। আর টাকা দিতে হতো না সরর্দারকে। এবার দিন ফিরতে থাকে আনোয়ারার।  

৫ বছর আগে আনোয়ারা নিজেই ফুল কিনে বিক্রি শুরু করেন। আগারগাঁও এলাকায় প্রথমে ৫০০ টাকা দিয়ে এক বান্ডেল ফুল কেনেন। কখনো একদিনেই সব ফুল বিক্রি হয়ে যেত কখনো কিছুটা সময় লাগতো। এখন তিনি দিনে তিন বান্ডেল ফুল কিনেন ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে। বিক্রি করেন তিন হাজার টাকায়। সব খরচ বাদ দিয়েও দিনে প্রায় ৫শ টাকা থাকে আনোয়ারা বেগমের। আর যাই হোক তিন সন্তান, নাতিদের নিয়ে দিনে তিন বেলা খেতে পারেন। বর্তমানে তিনি কামরাঙ্গিচরে দুই রুম নিয়ে ভাড়া থাকেন।

আনোয়ারার সেদিন-এদিন

স্বামী আব্দুল বারেককে শাহবাগে চা-পানের দোকান দিয়েছেন আনোয়ারা। অর্থের অভাবে সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারেননি। দুই ছেলে এখন হকারের কাজ করেন শাহবাগ এলাকাতেই।

আনোয়ারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, কতোদিন কতো রাত না খায়া কাটাইছি তার হিসাব নাই। যখন বাসা বাড়িতে কাম করতাম তখন মানুষের ঝুটা খাওন খাওয়াইতাম পোলাপাইনরে। এহনতো অন্তত সেই দিন নাই। পোলা-মাইয়া নিয়ে আর রাস্তায় ঘুমাইতে হয় না। মাথার ওপর ছাদতো আছে। ২০ বছর আগে খাওয়ার জোগানের জন্য ঢাকার শহর আইছিলাম। কাম করছি। কতো মানুষ কতো খারাপ কথা কইছে। কিন্তু কি করমু প্যাটতো মানতো না। তখনই বুঝছিলাম মানুষ কথা কইতে পারবো কিন্তু খাইতে দিবো না। তাই কাজ করছি নিজের মতো।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩১ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৭
ইউএম/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।