ঢাকা, সোমবার, ১৯ মাঘ ১৪৩১, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলানিউজকে শিল্প পুলিশ প্রধান

শিল্প সুরক্ষায় সর্বোচ্চ মনোযোগ

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৪ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৭
শিল্প সুরক্ষায় সর্বোচ্চ মনোযোগ শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুস সালাম/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘রফতানি বেড়েছে। শিল্পে এসেছে প্রবৃদ্ধি। কর্মচাঞ্চল শিল্পাঞ্চল। এর নেপথ্যে আমাদের ভূমিকাও কম নয়। শিল্পাঞ্চল পুলিশ আজ শ্রমিক আর মালিকপক্ষের কাছে আস্থার এক সংস্থা। যেটা পুলিশ বাহিনীরই অনন্য অর্জন’- নিজের বাহিনী নিয়ে এমন গর্বিত উচ্চারণই ছিলো শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুস সালামের কণ্ঠে।

প্রতিষ্ঠার পর শিল্প পুলিশের আবেদন যেমন বেড়েছে। তেমনি বেড়েছে এর পরিধি।

সেই সঙ্গে বেড়েছে কার্যক্রম আর জনবল। আমাদের সর্বোচ্চ মনোযোগ শিল্পের সুরক্ষা। শ্রমিকদের অধিকার আর ন্যায্যতা সমুন্নত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাহিনীর প্রতিটি সদস্য।

নারী শ্রমিকদের জন্যে বাহিনীতে সংযুক্ত হচ্ছেন নারী সদস্য। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ আর অনুশীলনের মাধ্যমে প্রতিটি সদস্যকে গড়ে তোলা হচ্ছে শ্রমিকবান্ধব হিসেবে। কারণ এ শ্রমিক ভাই-বোনেরাই তো শিল্পের প্রাণ। বলছিলেন শিল্প পুলিশের ডিজি আব্দুস সালাম।

ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশের শিল্প কারখানার নিরাপত্তার জন্য ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর গঠন করা হয় শিল্প পুলিশ। বর্তমানে এ পুলিশের ছয়টি ইউনিট রয়েছে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহে।

পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা পরিচালক হিসেবে পালন করছেন ইউনিটের প্রধানের দায়িত্ব।

প্রতিষ্ঠার সূচনা থেকেই সংস্থাটির মহাপরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুস সালাম।

পেশাগত জীবনে পুলিশের সপ্তম ব্যাচের এ কর্মকর্তার জীবনে রয়েছে বহুমাত্রিক ও বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতা। ছিলেন চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া আর রংপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি, চট্টগ্রাম আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, খুলনা, সিলেট মেট্রোপলিটন ছাড়াও চট্রগ্রাম রেঞ্জে অতিরিক্ত ডিআইজি, খুলনা ও সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি, ঢাকা মেট্রোপলিটন ও পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি ও পুলিশ একাডেমির প্রিন্সিপাল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
শিল্প পুলিশের একাংশ/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমশিল্প পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধি, আধুনিকায়ন ও চ্যালেঞ্জসহ নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি তিনি মুখোমুখি হন বাংলানিউজের।

আব্দুস সালাম জানান, মাত্র ৩ হাজার ৮০০ জনবল দিয়ে ৫ হাজার ২৫০ কারখানার নিরাপত্তা বিধান করছে শিল্প পুলিশ। এর বাইরে শিল্প এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় রয়েছে এ বাহিনী।

‘২০১৩ ও ২০১৪ সালটি ছিলো আমাদের জন্যে চ্যালেঞ্জের। সে সময়ের ভয়াবহ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জ্বালাও-পোড়াও আর পেট্রোল বোমার আতঙ্কের মধ্যেই আমরা হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে যেমন কারখানায় শিল্পের কাঁচামাল পৌঁছে দিয়েছি, তেমনি উৎপাদিত রফতারি পণ্য সঠিক সময়ে বন্দরে পরিবহনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি।

চ্যালেঞ্জ কিন্তু থেমে নেই। গুলশানে হলি আর্টিজেন রেস্তোঁরায় জঙ্গি হামলার পর বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের ক্রেতারা যখন নিরাপত্তা ইস্যুতে আতঙ্কিত। তখন আমরা তাদের পাশে দাঁড়ালাম- যোগ করেন শিল্প পুলিশ প্রধান।

‘আমরা আইজিপি স্যারের নির্দেশে গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), শ্রম মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করে ক্রেতাদের নিরাপত্তা দিয়েছি।

এছাড়াও বিভিন্ন কারখানায় বিদেশি যেসব কর্মকতা বা দক্ষ শ্রমিক ছিলেন, তাদের কর্মস্থলে আসা-যাওয়াসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাও দিয়েছি আমরা’- জানান আব্দুস সালাম।
শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুস সালাম/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম‘আজ শিল্পাঞ্চলগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন। শ্রমবান্ধব পরিবেশে নির্বিঘ্নে ঘুরছে শিল্পের চাকা। শিল্পাঞ্চল ঘিরে অসন্তোষ বা অরাজক পরিস্থিতি না থাকায় উৎপাদন বাড়ছে। প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। বাড়ছে শ্রমিকদের জীবনমান। এর সবকিছুর নেপথ্যেই কিন্তু আমাদের প্রয়াস।

শিল্পাঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন সময় শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্য‍কর ভূমিকা রেখে নিজেদের সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে এ বাহিনী।

শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রম অধিকার, শ্রম আইনের অনুসরণ, কাজের উপযুক্ত পরিবেশ, নারীর প্রতি আচরণ, শিশুশ্রম, বেতন-ভাতা-বোনাস, ওভারটাইম, শ্রমিককল্যাণ, শ্রমিকদের দাবি ইত্যাদি নানা বিষয় পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে কারখানাগুলো ঘিরে তৈরি করেছি নিরাপত্তা বলয়।

বিরামহীন তৎপরতায় শিল্প এলাকায় চাঁদাবাজি ও সহিংসতাসহ নানা অপরাধ নেমেছে শুন্যের কোটায়।

‘কোথাও কোনো সমস্যা হলেই আমরা সেখানে এড্রেস করছি। প্রয়োজনে মালিকদের সঙ্গে দেন-দরবার করে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করছি’।

বাহিনীর আধুনিকায়ন চলছে। প্রতিদিনই বদলাছে পৃথিবী। আমরাও নিজেদের নবায়ন করছি। বিধি প্রণয়নসহ শিল্প পুলিশের আধুনিকায়নে সরকারি নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৭
জেআর/ওএইচ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।