আমিন বাজার ব্রিজ লাগোয়া পুরনো লোহার বিজ্রের পাশে গাবতলি গরু হাট সংলগ্ন কয়লা ঘাট। তুরাগ পাড়ের এ স্থানটিতে কয়লা ব্যবসায়ীদের স্তূপ করে রাখা কয়লা যে কারোই নজরে পড়ে সহজে।
এদেরই একজন অবেনুর বেগম। গাবতলি পশুর হাট সংলগ্ন পুরনো লোহার ব্রিজের ঢালে একটি সাইকেল ভ্যানের ওপর বসেছিলেন তিনি। কাছে গিয়ে কুশলাদি জানতে চাইলে যেনো কালশিটে পড়া ছোট শরীরে আনন্দের ঝিলিক খেলে গেলো। পান খাওয়া মুখে এক রাশ হাসি ছড়িয়ে জানান দিলেন, ভালো আছেন তিনি। নাম জানতে চাওয়ায় বললেন, ‘পাখির মা’। কিছুটা থমকে গিয়ে জানতে চাইলাম, আসল নাম কি খালা? এবার আবারো সেই ভূবন ভুলানো হাসি উপহার দিলেন পাখির মা। বললেন, সবাই তো আমায় পাখির মা বইলেই ডাহে। বড় মেয়ের জন্মের পরতো আমার সত্যিকারের নাম হারায়েই গেছে। তবে মা-বাবা নাম রাখছিলো আবেনুর বেগম।
আবেনুর বেগম বাংলানিউজকে জানান, তুরাগ নদীর ওপারে, আমিন বাজারেই তাদের পূর্ব পুরুষের বসত। স্বামী হাবিবুর রহমানের বসতও ছিলো সেখানে। ৩০ বছর আগে তিনি গাবতলির পশুরহাটে এসে গোবরের ব্যবসা শুরু করেন। আগে মানুষ রেখে হাট থেকে গোবর কুড়িয়েই তা বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন দিন পাল্টেছে। হাটের ইজারাদারই আলাদা লোক রেখে গোবর বিক্রি করেন। সেখানে পাখির মা’দের যে প্রবেশ নিষেধ!
তাই বলে ব্যবসা থেমে নেই পাখির মার। বিকল্প ব্যবস্থাও নিয়েছেন তিনি। তাও ১০ বছরের বেশি সময় হলো। ঢাকা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাক ভরে গোবর আনেন তিনি। এসব এলাকার গরুর খামারীদের অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখেন। খামারিরা ফোন দিলেই ট্রাক নিয়ে ছোটেন তিনি। বড় এক ট্রাক গোবর খামার থেকে কিনে আনেন তিন থেকে চার হাজার টাকায়। ট্রাক ভাড়াসহ যার খরচ দাঁড়ায় ছয় হাজার টাকা।
আবেনুর বেগম জানান, এই এক ট্রাক গোবর আবার মাটি টানা ট্রাকের আড়াই থেকে তিন গাড়ি হয়। প্রতি গাড়ি গোবর তিনি বিক্রি করেন তিন হাজার টাকা করে। এভাবে প্রতিদিন গড়ে তার লাভ দাঁড়ায় দুই/তিন হাজার টাকা।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও বাসা, বঙ্গভবনসহ ঢাকার সকল উদ্যান, পার্ক বিশ্ববিদ্যালয়েই সার হিসেবে গোবর সরবরাহ করি। এছাড়া নার্সারি মালিক ও শখের বাগান মালিক ও মাছের খামারিরা আমার নিয়মিত ক্রেতা। প্রতিদিন তিন থেকে পাঁচ গাড়ি গোবর বিক্রি হয়। আজও রাতে (বৃহস্পতিবার) প্রধানমন্ত্রীর বাসায় পাঁচ গাড়ি পাঠাবো।
চার ছেলে-মেয়ে নিয়েই সংসার ছিল আবেনুর বেগমের। হাটের গোবরের ব্যবসা তাদের ভালোই রেখেছিলো। তিন বছর আগে সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন স্বামী হাবিবুর রহমান। বড় ও মেজো মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর তারা চলে গেছে সৌদি আরব ও জর্ডানে। ছোট মেয়েরও ভালো ভাবে বিয়ে দিয়েছেন। সেও জামাইয়ের কাছে সৌদি আরব যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একমাত্র ছেলে রবিউলকে নিয়ে এখন মিরপুর বড় বাজার এলাকায় ভাড়া থাকেন তিনি। ঘরে ছেলের বউ ও নাতি আছে। ছেলেই এখন ব্যবসার বাইরের কাজগুলো দেখে। কিন্তু তবু সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এখানেই থাকেন তিনি।
আবেনুর বলেন, ‘ছেলেরে তো কেউ চেনে না। আমারে না দেখলে কাস্টমার ফিরা যায়। আমারে ফোন করে। এইজন্যই সারা দিন এইহানে থাহি। আল্লাহর রহমতে, আপনাগো দোয়ায় খুব সুহে আছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৭
আরএম/জেডএম