ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মবার্ষিকী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মবার্ষিকী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

ঢাকা : শুক্রবার (১৭ মার্চ) বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার শেখবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালি মহানায়ক।এই দিনটিকে জাতীয় শিশুদিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।

নিভৃত গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া শিশু শেখ মুজিবই এক দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দেন। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পথ পেরিয়ে তিনি বাঙালিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন।

যার বহি:প্রকাশ ঘটে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। ৭১ এর ৭ মার্চ তিনি ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তি সংগ্রাম’, ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই প্রস্তুত থাক’---বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানই জাতিকে এক মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস যোগায়। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটি দেন।

শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজজীবনে শেখ মুজিব জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা নিপীড়ন দেখে এসেছেন। দরিদ্র মানুষের দুঃখ-কষ্ট-বঞ্চনা তাঁকে সারাজীবন সাধারণ দুঃখী মানুষের প্রতি ভালবাসায় উদ্বুদ্ধ করে তোলে।

চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়রা খাতুনের তৃতীয় সন্তান। ৭ বছর বয়সে তিনি পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তী সময়ে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল ও পরে গোপালগঞ্জ মিশন-স্কুলে লেখাপড়া করেন।

১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে কলকাতায় গিয়ে বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং বেকার হোস্টেলে আবাসন গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বিএ পাশ করেন। শেখ মুজিবুর রহমান এই সময়ে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সময়ে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শান্তি স্থাপনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অসম সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর তিনি পূর্ববাংলায় চলে আসেন এবং ঢাকাকে তাঁর রাজনৈতিক কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দেন ও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

ভ্রান্ত দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তান-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ববাংলা সফরে এসে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দিলে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ তথা গোটা বাঙালি জাতি প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়। তার উপর নেমে আসে জেল-জুলুম নির্যাতন। রাজনৈতিক জীবনে এক যুগেরও অধিককাল তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন। দুইবার তিনি ফাঁসিকাষ্ঠে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, ১৮ বার কারাবরণ করেছেন। তবু কোনো অত্যাচার নির্যাতন ও ভয়-ভীতি তাকে দমাতে পারেনি। পাকিস্তানি শাসক চক্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সকল আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য  তৈরি করেছেন। ’৫২, ’৫৪, ’৬২, ’৬৬ আর ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ পেরিয়ে ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় সবই বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামী ইতিহাসের একেকটি মাইলফলক। আর এই সংগ্রামের নেতৃত্ব ও প্রেরণার উৎস ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

স্বাধীনতাযুদ্ধের বিজয় লাভের পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি লাভ করে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশভূমিতে ফিরে আসেন। দেশে এসেই যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায় আত্মনিয়োগ করেন। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের এই মহান স্থপতি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন দেশ পরিচালনা করতে। মানবতার শত্রু ঘৃণ্য ঘাতকের দল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করে।

বাংলাদেশ সময় ০০০৪ ঘন্টা, মার্চ ১৭, ২০১৭
এসকে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।