তিলে তিলে গড়ে তোলা তাদের এসব বাড়ি-ঘর, দোকান, আসবাবপত্র ও জমানো টাকা-পয়সা কোনো কিছুই আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দোতলা বাড়ির রান্নাঘর থেকেই এই আগুন লাগে।
এদিকে, বাড়ির নিচতলা ও দোতলায় আলাদা দুটি রান্নাঘরে ছিলো মোট ৬টি গ্যাসের চুলা।
আব্দুল মান্নানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন বিউটি বেগম। তিনি একজন গৃহিনী। তার স্বামী গাড়িচালক।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি ঘুমাইয়া ছিলাম, আগুন আগুন চিৎকার শুইনা আমার ঘুম ভাঙ্গে। উঠে ঘরের দরজা খুলে দেখি উপরে আগুন জ্বলছে। আমি ভয়ে আমার সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে বাইরে বের হয়া যাই।
বিউটি জানান, প্রায়ই রান্নাঘরের গ্যাসের চুলা জ্বলতো। মালিক না করলেও ভাড়াটিয়ারা জ্বালাইতো। ভাড়াটিয়ার তুলনায় চুলা কম ছিলো বলে সবাই রান্না করতো তাই সারাদিনই চুলা জ্বলতো।
বস্তির বাসিন্দা মো. ফিরোজ বাংলানিউজকে বলেন, এই বাড়ির রান্নাঘরেই প্রথমে আগুন দেখা গেছে। তবে কিভাবে লেগেছে তা বলতে পারছি না। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন পুরো বস্তিতে ছড়িয়ে যায়। আমরা কিছুই বের করতে পারিনি। শুধু নিজে জীবনটা বাঁচাতে পেরেছি, ভাই।
সরেজমিনে ঘুরে ও বস্তির একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুল মান্নানের বাড়ির দোতলা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে।
এদিকে, রুহুল আমিন নামে এক বাস্তিন্দা জানান, ওই ঘরের দোতলায় রাতে মশার কয়েল জ্বালানো ছিল। সেখান থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে।
জানা গেছে, বেশ কিছুদিন আগেই বাড়ির মালিক আব্দুল মান্নান ও তার স্ত্রী খাদিজা বেড়াতে গিয়েছিলেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে। আর বাড়িতে ছিল তাদের বড় মেয়ে। রাতে মোবাইল ফোনে আগুনের খবর পান তিনি। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকালে তিনি ছুটে আসেন।
আগুনে পুরে ছাই হয়ে যাওয়া নিজের বাড়িটি দেখে আহাজারি করতে থাকেন তিনি।
আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, সারাজীবন কষ্ট করে কামাইলাম আর সব আগুনে পুরে ছাই হয়ে গেল। আমি এখন আর কাজ করতে পারি না। কিভাবে চলমু?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুল মান্নান বনানীতে পান-বিড়ির দোকান করতেন। কষ্টের পয়সায় কড়াইল বস্তিতে তিনি এই বাড়িটি তৈরি করনে। অসুস্থতার কারণে তিনি কাজ করতে না পারায় বাড়ি ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতেন। এখন আগুলে তার সব কিছুই পুড়ে ছাই।
এর আগে, বুধবার (১৫ মার্চ) দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকাল ৭ টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে। খুব শিগগিরই এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৭
এসজেএ/জেএম