রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির আতিথ্য গ্রহণ করায় শেখ হাসিনাই হবেন নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতিভবনে অবস্থান-করতে-যাওয়া প্রথম বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বরণ করে নেওয়া হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানান, এবারে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের সংখ্যা হতে পারে শতাধিক। শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, গোটা বহরের সবাই এবার ভারতের রাষ্ট্রপতিভবনে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎও করবেন।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন সেদেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। ওই দিনই এক অনুষ্ঠানে একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন শেখ হাসিনা। এবারের ভারত সফরের সময় প্রণব মুখার্জির আমন্ত্রিত অতিথি হয়েই রাষ্ট্রপতিভবনে অবস্থান করবেন শেখ হাসিনা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর আগেও শেখ হাসিনা অনানুষ্ঠানিকভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতিভবনে রাত্রিযাপন করেছেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রণব মুখার্জির আমন্ত্রণে ৬ দিনের সফরে ভারত গিয়েছিলেন। নয়াদিল্লিতে অবস্থানকালে আবদুল হামিদ ভারতের রাষ্ট্রপতিভবনে অবস্থান করেন। তার সঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমসহ সফরসঙ্গীদের সবাই রাইসিনা হিলে অতিথি হিসেবেই ছিলেন।
৪০ একর জমিতে নির্মিত ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবন রাইমিনা হিল নামের চার তলা ভবনটিতে রয়েছে ৩৪০ কক্ষ। একই সময়ে এ ভবনটিকে এক হাজার অতিথির থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রতিতলায় রয়েছে পাঠাগার। রয়েছে ৭৪টি লবি, ১৮টি সিঁড়ি ১৭টি ঝর্না। ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এই ভবনটি। ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয়ের ভবনটিই এখন ভারতের রাষ্ট্রপতিভবন। ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী থাকেন এ ভবনে।
নয়াদিল্লিতে ভারতের রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জ। নয়াদিল্লিকে রাজধানী শহরের আদলে গড়ে তোলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সে সময়ের প্রখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি এডুইন ল্যান্ডসার লুটিয়েন্সের হাতে। রাইসিনা হিল হয়ে উঠল এক নতুন নগরী হিসেবে।
পরিকল্পনা কমিশন ১৯১২ সালে প্রাসাদ তৈরির উদ্যোগ নেয়। এজন্য ব্রিটিশ সরকার অনুমোদন দেয় চার লাখ পাউন্ড। চার বছরের মধ্যে ভবনটি নির্মাণ শেষ হবে বলে মনে করলেও ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে শুরু হয়ে গেলে অর্থসংকট তীব্র হয়। একারণে এটি বানাতে সময় লাগে প্রায় ১৭ বছর। হিন্দু, বৌদ্ধ, মোগল, গ্রিক, রোমান স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে প্রাসাদটি তৈরি করেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক।
রাষ্ট্রপতিভবনের ৩৪০টি কক্ষের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে ইয়েলো ড্রইং রুম। এখানে মন্ত্রিসভার সদস্য, স্পিকারসহ সাংবিধানিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা শপথ নেন রাষ্ট্রপতির কাছে। রয়েছে ভোজসভা ঘর। এখানে ১০৪ জন অতিথির বসার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে আলোঝলমল অশোক হল। এই ঘরের মেঝেটি কাঠের তৈরি। এখানে বিদেশি অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতি ভবনের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে দরবার হল। এক সময় এখানে ছিল সিংহাসন। যেখানে ব্রিটিশ অধিপতি বসতেন। আজ আর সেখানে সিংহাসন নেই। সিংহাসনের স্থানে এসেছে কারুকার্য খচিত আসন।
এ দরবার হলেই ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিরন্তর সংগ্রামের ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধি শান্তি পুরুস্কারে ভূষিত করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
কেজেড/জেএম