ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ মাঘ ১৪৩১, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

শ্রমিকের ১০৭ কোটি টাকা দেননি ড. ইউনূস, হচ্ছে ১০০ মামলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
শ্রমিকের ১০৭ কোটি টাকা দেননি ড. ইউনূস, হচ্ছে ১০০ মামলা গ্রামীণ টেলিকম ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ঢাকা: ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এবার শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগ তুলেছেন নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবিদের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারী, কর্মকর্তা ও সাধারণ শ্রমিকরা। এরই মধ্যে তার বিরুদ্ধে অন্তত ১৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে শ্রম আদালতে। 

সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে ড. ইউনুসকে প্রথমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে কোনো জবাব না পেয়ে আদালতে মামলাগুলো ঠুকে দেন গ্রামীণ টেলিকমের ১৪ জন সংক্ষুব্ধ ১৪ কর্মচারী। আরো কয়েক ডজন ব্যক্তি ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সবমিলিয়ে শতাধিক মামলা দায়ের হতে যাচ্ছে এই নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে।   

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকম ১৯৯৫ সালে ১৬ অক্টোবর প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৭ সালে ১৭ জুন বাণিজ্যিকভাবে কার‌্যক্রম শুরু করে। নরওয়েভিত্তিক মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি টেলেনরের বাংলাদেশ চ্যাপ্টার ‘গ্রামীণ ফোন’র কারিগরি সহায়তায় ‘গ্রামীণ টেলিকম’ কাজ করছে।  

সূত্রগুলো জানিয়েছে এই প্রায় এক দশকে বাংলাদেশে বিকাশমান টেলিযোগাযোগ খাতে বাণিজ্য করে বিপুল মুনাফা অর্জন করেছে গ্রামীণ টেলিকম। যার মোট অংক দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি।

** কর্মীদের ১০৭ কোটি টাকা লোপাট গ্রামীণ টেলিকমের
** গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে মামলা করছেন কর্মীরা
** আইন লঙ্ঘনে গ্রামীণ টেলিকমকে শ্রম কল্যাণ তহবিলের চিঠি

শুরুর দিকে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ ব্যাংক’র যৌথ প্রকল্প ‘পল্লী ফোন’ টেলি যোগাযোগের ক্ষেত্রে গ্রামীণ পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। গ্রামীণ ব্যাংকের নারী গ্রাহকরা সমিতির মাধ্যমে টাকা তুলে ‘পল্লী ফোন’র কল সার্ভিস সেবা দেয়। তার মাধ্যমেই উঠে আসে বিপুল অংকের মুনাফা।  
 
সবশেষ হিসাবেও গ্রামীণ ফোন’র সঙ্গে ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম’র রয়েছে ৩৮ শতাংশ শেয়ার। এর মধ্যে গ্রামীণ ফোন’র সঙ্গে যৌথভাবে ওপেন মার্কেটে ৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে গ্রামীণ টেলিকমের। মাইক্রোসফট্ ও হুয়াওয়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট কোম্পানি দু’টির সঙ্গেও রয়েছে গ্রামীণ টেলিকমের যৌথ ব্যবসায়ী প্রকল্প।

সূত্রমতে, এসব প্রকল্প থেকে প্রতি অর্থ বছরে শত শত কোটি টাকা মুনাফা করছে ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম।

কিন্তু সে অর্থ স্রেফ নিজের পকেটে রাখছেন নানাভাবে আলোচিত-সমালোচিত এই নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ। যাদের শ্রম ও ঘামে এই মুনাফা অর্জন তাদের ন্যয্য হিস্যা বুঝিয়ে দিচ্ছেন না বছরের পর বছর ধরে। শ্রম আইনে নির্ধারিত আইনসিদ্ধ সেই হিস্যা পেতেই এবার শ্রমিক-কর্মচারীরা সোচ্চার হয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রথমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে তারা এখন একের পর এক মামলা ঠুকে দিচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে।  
 
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ২৩২ ধারা অনুযায়ী বছর শেষে কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন অনূন্য এক কোটি টাকা অথবা বছর শেষে স্থায়ী সম্পদের মূল্য দুই কোটি টাকা হলে এই আইনের পঞ্চদশ অধ্যায় (কোম্পানির মুনাফায় শ্রমিকের অংশ গ্রহণ) প্রযোজ্য হবে।
 
শ্রম আইন ২০০৬ এর পঞ্চদশ অধ্যায়ের বিধান মতে কোম্পানির ৫ শতাংশ নিট মুনাফার ৮০ ভাগ অর্থ সকল শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের মধ্যে সমানভাবে বণ্টন করতে হবে। ১০ ভাগ অর্থ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের কল্যাণে ব্যয় হবে। বাকি ১০ ভাগ অর্থ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে জমা দিতে হবে।
 
গ্রামীণ টেলিকমে কর্মরত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের অভিযোগ, গত এক দশকে নিট মুনাফার একটি টাকাও শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন করেনি ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম। অথচ কোম্পানির হিসাব বিবরণীতে দেখা যায়, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পয্ন্ত গ্রামীণ টেলিকম নিট মুনাফা অর্জন করেছে ২ হাজার ১ শত ৫৮ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার ৪ শ’ ১৭ টাকা।
 
অর্জিত এ মুনাফায় ৫ শতাংশ হারে শ্রমিক অংশ রয়েছে ১০৭ কোটি ৯৩ লাখ ২৬ হাজার ২০ টাকা। যার পুরোটাই এখন নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পকেটে।
 
সূত্রমতে, নিট মুনাফায় নিজেদের অংশ দাবি করে সম্প্রতি গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক উপ ব্যবস্থাপক শেখ শরিফুল ইসলাম, উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান, গুলশান আরা, আবুল কালাম আজাদ, মো. এস এ এম সাইফুল ইসলাম, সহকারী ব্যবস্থাপক মাসুদ আক্তার পলাশ, কাজী ফাহিম রেজা নুর, মো. আমীর হোসেন, কর্মকর্তা চন্দন কুমার রায়, মো. সাজ্জাদ সিদ্দিক, হানযালা ইব্রাহিম, সহ কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন, সজিবুর রহমান ও মোস্তফা আল আমীন গত ৮ মার্চ গ্রামীণ টেলিকম’র চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসানকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
 
কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জবাব না পেয়ে সম্প্রতি ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ওই ১৪ সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি। তাদেরকে আইনী সহয়তা দিচ্ছে ‘অ্যাটর্নিজ’ নামের একটি আইনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
 
‘অ্যাটর্নি’র ম্যানেজিং পার্টনার অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, নিট মুনাফার ৫ শতাংশ ‍শ্রমিকদের বুঝিয়ে না দিয়ে গ্রামীণ টেলিকম বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর পঞ্চদশ অধ্যায় লঙ্ঘন করেছে। শ্রমিকরা যাতে তাদের পাওনা বুঝে পায়, সেই জন্য আমরা শ্রম আদালতে মামলা করেছি। আশা করছি শ্রমিকরা তাদের পাওনা বুঝে পাবেন।
 
মামলার অন্যতম বাদী গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক উপ ব্যবস্থাপক শেখ শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আইন অনুযায়ী কোম্পানির লভ্যাংশে শ্রমিকের অংশ রয়েছে। কিন্তু সেটি আমরা বুঝে পাইনি। মামলা শুধু নিজেরে জন্য করিনি; গ্রামীণ টেলিকমে কর্মরত সবাই যাতে তাদের পাওনা বুঝে পান, সেই জন্য করেছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
এজেড/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।