অপরাধ বিশ্লেষকরাও বলছেন, এ ধরনের আত্মঘাতী হামলা বড় ধরনের হামলার সংকেত। হলি আর্টিজানে হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় ব্যাঘাত ঘটাতেই এ ধরনের হামলা চালাচ্ছে জঙ্গিরা।
শনিবার (১৮ মার্চ) ভোর ৫টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের শেখের জায়গা এলাকায় র্যাবের অস্থায়ী চেকপোস্টে হামলা চালানোর চেষ্টা চালান এক মোটরসাইকেল আরোহী। পরে র্যাবের গুলিতে নিহত ওই আরোহীর ব্যাগ থেকে বোমা ও একটি ভেস্ট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় র্যাবের দুই সদস্য আহত হন।
এর আগে শুক্রবার (১৭ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর উত্তরার আশকোনায় হাজি ক্যাম্পের পাশে র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পের ভেতরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটান আরেকজন। বিস্ফোরণে বোমা বহনকারী নিহত হন, আহত হন দুই র্যাব সদস্য।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আত্মঘাতী হামলার বিষয়ে আমাদের বাড়তি নজর রয়েছে। জঙ্গি দমনে র্যাব কাজ করছে’।
খিলগাঁও অভিযানে নিহত ও আশকোনায় বোমা বহনকারীর পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে। তাদের সহযোগীদেরকে শনাক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত বছর হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানায় সফল অভিযানে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে জঙ্গিরা। সম্প্রতি টঙ্গীতে হরকাতুল জিহাদ অব বাংলাদেশের (হুজিবি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানকে ছিনিয়ে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা, কুমিল্লায় শক্তিশালী বোমাসহ নব্য জেএমবির দুই সদস্য গ্রেফতার ও সীতাকুণ্ডে দু’টি আস্তানায় আত্মঘাতী হামলায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়। গত বছরের শেষ দিকে আশকোনার সূর্য ভিলায় যে ধরনের বোমা পাওয়া গেছে, সে তুলনায় সীতাকুণ্ড ও র্যাবের ক্যাম্পে বিস্ফোরিত বোমার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা কয়েক গুণ বেশি।
গ্রেফতারের পর এসব জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, নতুন সদস্য ও সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে সংগঠনকে শক্তিশালী করা ও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। নিজেদের অবস্থান জানান দিতেই আত্মঘাতী হামলাসহ বিভিন্ন হামলা করার কৌশল খুঁজছেন জঙ্গিরা।
গোয়েন্দাদের ধারণা, নব্য জেএমবির শীর্ষনেতারা বিভিন্ন অভিযানে নিহত হওয়ার পর মূসার নেতৃত্বে তারা আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন।
অপরাধ বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের আত্মঘাতী হামলা আরো বড় ধরনের দুর্যোগের সংকেত দিচ্ছে। হলি আর্টিজানে হামলার পর প্রায় ৭০ শতাংশ জঙ্গি তৎপরতা রুখে দিতে পেরেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাকি যে ৩০ শতাংশ রয়েছে, তারা এখন মরণ কামড় দিতে প্রস্তুত বলেই মনে হচ্ছে। তারা যতোই কোণঠাসা হোক, তাদের মতাদর্শ মরে না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা হলি আর্টিজানের মতো বড় ধরনের হামলা চালাতে পারবেন না। তাই ছোট পরিসরে তাদের অবস্থান জানান দিতে জঙ্গিরা আত্মঘাতী হামলার পথ বেছে নিয়েছেন বলেও মনে করছেন এই বিশ্লেষক।
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পুলিশের যে অভিযান চলছে, তাকে আরো বেগবান করে অপরাধের নতুন ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশের সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমান্ডার (অব.) ইসফাক এলাহী চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা চলছে। জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। তবে জঙ্গিদের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশে জঙ্গি হামলা অনেক দেশের তুলনায় নগন্য হলেও স্বস্তির সুযোগ নেই। বর্তমানে এ ধরনের আত্মঘাতী হামলা আমাদের জন্য একটা বড় হুমকি’।
তিনি আরও বলেন, ‘এসব জঙ্গিদের কারা টেনিং দিচ্ছে, তাদের অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরকের যোগানদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টিসহ জনসচেতনতা বাড়াতে হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
পিএম/আরআর/এএসআর