‘আনফিট’ লেগুনা আর ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ পালকিই এখন এ মহাসড়কের ‘মাথাব্যথা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু কী তাই, এসব যানবাহনের স্টিয়ারিংও তুলে দেয়া হয়েছে অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু-কিশোরদের হাতে।
চলন্ত গাড়িতে তারা নিজেদের মতো যাত্রীদেরও বাদুরঝোলা করে গন্তব্যে পৌছে দিচ্ছে। বেশিরভাগ সময়েই এসব ‘আনাড়ি’ চালক ব্যস্ত মহাসড়কে একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করে বেপরোয়া গতির প্রতিযোগিতাতেও অবতীর্ণ হচ্ছে। এতে হরহামেশাই মহাসড়কে রক্ত ঝরছে। প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) রাতে ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেলো এমন ভয়ঙ্কর চিত্র। গণপরিবহনের স্বল্পতার ধুয়া তুলে অবৈধ এসব পরিবহন মালিক-চালক প্রতিনিয়তই যাত্রীদের পকেট কাটছে। তবুও দেখভালের সংশ্লিষ্টদের এ নিয়ে কোন বিকার নেই।
জানা যায়, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহের ভালুকার মাস্টারবাড়ি পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার লেগুনা ও পালকি মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
বেপরোয়া ও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ছুটে চলা এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না।
গাজীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি থেকে জান্নাতুল পরিবহন নামে একটি পালকির পেছনে ছুটে দেখা গেলো- চালক অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর। আর সহকারীও বয়সে শিশু।
চলন্ত গাড়িটির পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে হাত ছেড়ে শুধু পাদানিতে পায়ের ওপর ভর করে টিকে আছে সহকারী।
চালক যখন-তখন ব্রেক কষছে, আবার জোরে টান দিচ্ছে। পাশ দিয়েই ছুটে চলা আরেকটি পরিবহনের সঙ্গেও রেস করছে। কার আগে কে গন্তব্যে পৌঁছুবে এ নিয়েই যেন তাদের মাঝে চলছে এমন গতির লড়াই।
পালকি থেকে স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় নামা বারেক বেপারী (৪৫) নামে এক যাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, এসব যানের চালকদের সবচেয়ে বড় সমস্যা, তারা বড় গাড়িকে সাইড দিতে চায় না। নিজেদের ইচ্ছামতো গাড়ি চালায়। বাসের স্বল্পতার কারণেই বাধ্য হয়েই এসব বাহনে চড়তে হয়।
সূত্রমতে, অনুমোদনবিহীন এসব গাড়ি থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করছে হাইওয়ে পুলিশ ও বিআরটিএ’র এক শ্রেণির কর্মকর্তা। আর ‘বখরা’ যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের সুযোগ-সন্ধানী নেতাকর্মীদের পকেটেও। ফলে মহাসড়কে লাগামহীন এসব যানবাহনের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে।
গাজীপুরের মাওনা টু স্কয়ার মাস্টারবাড়ি পর্যন্ত চলা একটি পালকির চালক বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে জানায়, এক সময় এ মহাসড়কে শুধু লেগুনাই চলতো। এখন এ বাহনটি নামানো হয়েছে। একে কেউ পালকি, কেউ সাথী আবার কেউ টাটা ভাইরাস নামে ডাকে।
আলাপ হলো মাওনার ছায়াগঞ্জ অবদার মোড় এলাকার পালকির চালক ইয়াছিনের (১৪) সঙ্গে। অল্প বয়সী এ চালকের দাঁড়ি-গোঁফ গজায়নি। সে জানালো, মহাসড়কে প্রতিদিন ছুটে চলা প্রায় ৮০ ভাগ লেগুনা ও পালকি’র চালকের লাইসেন্স নেই। বছর দেড় কী দুই সহকারী হিসেবে এ যানের পাদানিতে ভাড়া কাটা সহকারীরাই চালক বনে যায়। তার নিজের বেলাতেও এমনটি ঘটেছে।
এ সময় আনাড়ি এ চালক পরিচয় করিয়ে দেয় তার সহকারী মুহিবুলের সঙ্গে। এ শিশুটির বয়সও বড়জোর ১০ কী ১২। দু’ বেলা খাবারের তাগিদেই তাকে এ পথে নামতে হয়েছে।
মুহিবুল জানায়, পালকির পাদানিতে দাঁড়িয়ে এক হাতে হাতল ধরে অন্য হাতে নিত্য তাকে ভাড়া কাটতে হয়। অনেক সময় যাত্রীদের সঙ্গে পাদানিতেই গাদাগাদি করে দাঁড়াতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
এমএএএম/জেডএম