হঠাৎ নৌকায় হানা দেয় বাঘ। মুখে থাবা মেরে তিন ভাইয়ের মধ্যে হাসমতকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল।
প্রাণে বাঁচলেও বাঘের থাবায় বিকৃত হয়ে যায় হাসমতের বাম চোখ, নাক, মুখসহ মুখমণ্ডলের বাম অংশ। এরপর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টানা দুই বছর চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। কিন্তু এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বিড়ালক্ষ্মী গ্রামের মৃত মুনছুর সরদারের ছেলে হাসমত সরদার।
একবার বাঘের হাত থেকে ফিরেও ফের বাদায় যেতেন হাসমত। হঠাৎ একদিন তার সামনে থেকেই বাঘে তুলে নিয়ে যায় শ্যামনগর উপজেলার কৈখালীর হাসনাতকে। তারপর থেকে আর বাদায় পা দেননি তিনি।
এখন সেট থেকে মাছ কিনে তা বিক্রি করে যা আয় করেন তাতে সংসার চলে না তার। ওষুধ কিনতেই চলে যায় আয়ের অর্ধাংশ। নিজের জন্য দৈনিক ১০৫ টাকার ওষুধসহ স্কুল পড়ুয়া তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কোনোমতে দিন চলে তার। কিন্তু কেউ কখনও সাহায্যের হাত বাড়ায়নি তার দিকে। আর এভাবেই চলছে ২১টি বছর। বাংলানিউজকে হাসমত বলেন, ১৫ বছর বয়স থেকেই জঙ্গলে যেতাম। ১৮ বছরের মাথায় বাঘে ধরে। এখন বয়স ৩৯। এই ২১ বছর কীভাবে যে জীবন চালায়ছি, সে আমি জানি। বাপের তিন বিঘা জমি বিক্রি কইরে ভাইরা আমার চিকিৎসা করিল। এখন ১০ কাঠা জমিতে আমরা সাত ভাই পরিবার পরিজন নিয়ে থাকি। আমার কোনো ঘর ছেলো না। স্থানীয় এক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কোনোমতে একটা দুই চালা ঘর দিছি। এখনো টাকা শোধ দিতি পারিনি। পাঁচজনের সংসার। ওষুধ কিনতি সব যায়।
নানা সামাজিক প্রবঞ্চনা সহ্য করেও জীবন সংগ্রামে লড়ে যাচ্ছেন আত্মপ্রত্যয়ী হাসমত। বাড়ির বাইরে কাপড় দিয়ে মুখ বেধে চলেন হাসমত। তা না হলে তাকে দেখে ভয় পায় সবাই। কেউ তার পাশে আসতে চায় না।
হাসমত বলেন, ডাক্তাররা প্লাস্টিক সার্জারি কইরে মুখে চামড়া লাগিয়ে দিলো। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি, ইনফেকশন হয়। দুই দিন ভাল, তো তিন দিন খারাপ, যন্ত্রণা হয়। অনেক কষ্ট কইরি দুই ছেলে ও এক মেয়েকে স্কুলে পাঠাই। আমি কাজ কইরি খাই। কিন্তু এতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা কি আমাগির দ্বারা সম্ভব। আপনারা ছবি তুইলি নিলি লাভ কি? প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি।
সুন্দরবন গবেষক পিযুষ বাউয়ালী পিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, এতো কিছুর পরও হাসমত যেভাবে জীবনযাপন করছেন তা সবার কাছে অনুকরণীয়। অবশ্যই তার চিকিৎসার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর এগিয়ে আসা উচিত।
এজন্য তাকে নিয়মিত চিকিৎসা ভাতা দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
এসআই