বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ব্যাংকের ১৪তলায় বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের কক্ষে আগুন নেভানোর পর অর্থ প্রতিমন্ত্রী, ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ও ব্যাংকের এক নির্বাহী পরিচালকের প্রতিক্রিয়ায় এমন তথ্য উঠে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাত আনুমানিক ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে থার্টিন ফ্লোরে আগুন দেখা দেয়।
আগুনের ঘটনায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তদন্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গভর্নর একজন নির্বাহী পরিচালকের (আহমেদ জামাল) নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি করে দিয়েছেন। এ কমিটি ২৮ মার্চের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন’।
ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে নিরুপণ করছি, ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। একজন মহাব্যস্থাপকের চেম্বারে আগুন লাগে। ওখানে মূল্যবান কিছু ছিলো না। কাজ শেষে তিনি সব ফাইলপত্র ডিসপোজাল করে গেছেন’।
কিভাবে আগুন লেগেছে কিংবা এটা নাশকতা কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন,‘ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। এটা তারা তদন্ত করে দেখছেন। সেটি এখন বলা যাবে না। তবে এটি একটি সামান্য ঘটনা। সামান্য ক্ষয়ক্ষতি। আগুন লাগা একটি ইনসিডেন্ট। এটার সঙ্গে রিজার্ভ চুরির কোনো যোগসূত্র নেই। বৈদেশিক মুদ্রা ও রিজার্ভ বিভাগ আলাদা। এটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। এটা একটা সিম্পলি ইনসিডেন্ট। দুর্ঘটনা ছাড়া কিছু না’।
আগুনে মূল্যবান ডকুমেন্ট পুড়ে গেছে কি-না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘না। যেহেতু সন্ধ্যার পর ঘটনা ঘটেছে, তাই ওই দফতরের সব ফাইল সেকশনে ডিসপোজাল দিয়ে তিনি (মহাব্যবস্থাপক) চলে গেছেন। কিছু কাগজপাতি পোড়া গেছে। এগুলো নরমাল, ওয়েস্ট ফাইল’।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এখানে রাখ-ঢাকের কিছু নেই। আমরা গভর্নরকে সরকারের পক্ষ থেকে বলেছি, এখানে যা ঘটেছে, যা জানতে পেরেছেন, তাই বলবেন’।
আগুন লাগার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গভর্নর সাহেবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, বর্তমান আগুন নেভানোর যে ব্যবস্থা আছে, এটাকে আরও আপডেট করা। আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজন আছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন। ফায়ার সার্ভিসের ডিজিও ছিলেন। তিনিও কিছু প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে রেখেছেন। এখানে একটি ইউনিট স্ট্যান্ডবাই থাকতে পারে’।
রিজার্ভ চুরি, হ্যাকিংয়ের সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র আছে কি-না, এ প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে বলবো না। কারণ, ফেডারেল রিজার্ভ অন্য দেশে। আর এটা হলো, একটা টারমিনালের সমস্যা। অর্থমন্ত্রী দেখেছেন। আমরা এটাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবো। কাকতলীয় হোক, আর যাই হোক, বার বার এটা হওয়া সঠিক নয়। কোনো ড্যামেজ হলে সরকারের ওপরই বর্তাবে। এটা দেখা আমাদের দায়িত্ব। দু’টি কমিটি (তদন্ত) হয়েছে। কাল (শুক্রবার) অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবো। যেন আমাদের তরফ থেকে আরও উঁচু পর্যায়ে টেকনিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ নিয়ে দেখার জন্য সুপারিশ করবো’।
আগুনে কি ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কি কাগজ পুড়েছে, এটা আমি জানি না’।
এটা ষড়যন্ত্র কি-না এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটা বিশ্বাস করি না। ষড়যন্ত্র কারা করবে? কেন করবে? কিছু ভিত্তি থাকা প্রয়োজন। তবে অভ্যন্তরীণ কিছু আছে কি-না, এটা দেখা প্রয়োজন। বাইরের কেউ করছে বলে মনে হয় না। হ্যাকিং বাইরের লোকজন করেছে টাকা মারার জন্য। তারা তা করেছে। এবারেরটি (আগুন) ওইদিকে যায়নি। কিছু কাগজ পুড়েছে। কি ধরনের কাগজ। কোনো ধরনের কাগজ, সেটা না জানা পর্যন্ত বলা যাবে না। অভ্যন্তরীণ কিছু আছে কি-না, তা দেখা প্রয়োজন’।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আলী আহমেদ খান ঘটনাস্থলে ব্রিফিং করে জানান, ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগুনের সূত্রপাত, কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ৫ কর্মদিবসের মধ্যে এ কমিটি রিপোর্ট দেবে।
তিনি বলেন, ‘১৪তলার দক্ষিণ-পূর্ব কোণের ওই কক্ষের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পুড়েছে। কোনো কম্পিউটার সার্ভারে আগুন লাগেনি। তবে কিছু ফাইলপত্র পুড়ে গেছে। কিভাবে আগুনের সূত্রপাত, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
আলী আহমেদ বলেন, যে কক্ষ পুড়েছে, সেখানে একটি ইউপিএস ছিল। ওইটা থেকে আগুন লাগতে পারে।
আগুনে গুরুত্বপূর্ণ কোনো নথি পুড়েছে কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা তা খতিয়ে দেখছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৫২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭
ইএস/এমএফআই/এএসআর
** বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুনের ঘটনা তদন্তে দুই কমিটি
** বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুনের ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি
** বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে
** বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট