কচি মুখ থেকে শুরু করে হত দরিদ্র পরিবারের যাত্রীদের এমন অকাল ও করুণ মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউ।
ভয়াবহ এ সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে এতো তাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ায় শুক্রবার (২৪ মার্চ) ভোর থেকেই ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের মেহেরবাড়ি এলাকায় শত শত উদ্বিগ্ন-উৎকন্ঠিত মানুষের ঢল নামে।
ঘুমকে হার মানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি স্বেচ্ছায় হতাহতদের উদ্ধারে পাশে দাঁড়ায় স্থানীয়রা।
তবে চোখের সামনে ছটফট করে মানুষের এমন মৃত্যু অনেকের অশ্রু গড়িয়েছে। তাদের চোখে-মুখেও যেন ছিলো বিমর্ষ ছাপ।
ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শহীদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের চারলেনের কাজ চলায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ঢাকা থেকে জামালপুরগামী সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকটি শুক্রবার (২৪ মার্চ) ভোররাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ৯ জন ও হাসপাতালে নেওয়ার পর আরো একজনের মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। গুরুতর আহত ৩ জনকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তির পর আরো একজন মারা যান।
পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে নিহতরা হলেন- তারাকান্দা উপজেলার একই পরিবারের আজিজুল ইসলাম (৪০), তার স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৩৫), তিন সন্তান মেহেদী হাসান (১১), নয়ন (৯) ও সিজান (৩)।
আর শেরপুরের চারজন হলেন- শেরপুরের সিরাজুল ইসলাম (২৮), শাহজাহান হোসেন (৪০), আব্দুল কদ্দুস (৩৫), মো. সেলিম (২৮)। বাকী একজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
দুর্ঘটনাস্থল মেহেরবাড়ি এলাকা থেকে মাত্র ২’শ গজ দূরে বাড়ি শ্রমিক নেতা হানিফ খানের (৪৫)। ভোর রাতে তিনি ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় আচমকা বিকটশব্দে তিনি বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠেন। ঘরের জানালা দিয়ে দেখেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকটি উল্টে পড়ে গেছে।
এরপর ঘটনাস্থলে ছুটে এসে দেখেন সিমেন্টের বস্তার নিচে চাপা পড়েছেন অনেকেই। বেশ কয়েকজনের গোঙানির শব্দ পেয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করেন।
তিনি বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো দুই-তিনজন মানুষ হবেন। এরপর আরো অনেক মানুষকে চাপা পড়তে দেখে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই।
এরপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা একে একে ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। ‘আমার জীবনে একসঙ্গে এতো লাশ কখনো দেখিনি’। এতোগুলো প্রাণের অকাল মৃত্যুতে মুহুর্তেই গোটা এলাকায় মুহুর্তেই শোকের স্তব্ধতা নেমে আসে। ’
তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর পরই চোখের পলকে চালক ও সহকারী চম্পট দেন। তবে চালক বা সহকারী পালিয়ে যাবার বিষয়ে নিশ্চিত করে কোন তথ্য দিতে পারেননি ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ।
দুর্ঘটনার খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় মেহেরবাড়ি এলাকার চঞ্চল চৌকিদার (৪২)। তিনি জানান, মহাসড়কের দুর্ঘটনার পয়েন্টটিতে গর্ত ছিলো। কিন্তু ব্যারিকেড ছিলো না। রাস্তার মেরামত কাজ চলছে এমন সতর্কবাণীও ছিল না। ফলে ভুল পথে গাড়ি গর্তে গিয়ে উল্টে পড়ে যায়।
তবে তিনি এজন্য চালকের বেপরোয়া মনোভাবকেও দায়ী করেন। তার ভাষ্যে- চালক ঢাকা থেকে ময়মনসিংহমুখী লেনে গাড়ি না চালিয়ে বিপরীতমুখী লেনে ছুটেছেন। তার ভুলেই এ মর্মান্তিক ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, ট্রাকে থাকা সিমেন্টের বস্তার ওপরে বসে ময়মনসিংহের তারাকান্দা ও শেরপুরের হতদরিদ্র যাত্রীরা বাড়ি ফিরছিলেন। তারা নিজেরাও হয়তো জানতেন না সস্তায় বাড়ি ফিরতে গিয়ে নিজেদের প্রাণই বিসর্জন দিতে হবে।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এ মানুষগুলোকে দিতে হলো চড়া মূল্য, একথা বলছিলেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় মাস্টারবাড়ি এলাকার ক্ষুদে ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম।
** ভালুকায় সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক উল্টে ১০ জন নিহত
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৭
এমএএএম/বিএস