স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে পড়ে অভিযোগ তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগী প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক আকন।
তিনি বলেন, বরিশাল থেকে এসে রাজাপুরের সাতুরিয়া এমএম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করি।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মীমাংসার কথা বলে থানার অভিযোগটি তুলে নিতে বলেছেন। তাই অভিযোগ করেও আবার তুলে নিয়েছি। স্থানীয় নেতারা আমাকের থানায় সঙ্গে নিয়ে অভিযোগ তুলে নিয়ে এসেছেন।
ভূক্তভোগী শিক্ষক আরো বলেন, অভিযোগ তুলতে গিয়ে থানার ওসি বলেন এ ঘটনার পর ছাত্রদের নিয়ে নাকি আমি আন্দোলন করিয়ে বিষয়টি ঘোলাটে করেছি। কিন্তু আমাকে যেভাবে লাঞ্ছিত (ঘুষি আর থাপ্পর) করা হয়েছে, তা তো অনেকের সামনেই করা হয়েছে। ছাত্ররা কিভাবে জেনেছে তা আমি তো জানিনা। তারা অন্য মারফত শুনে বিক্ষোভ করেছিলো।
তবে যাই হোক এ নিয়ে এখন আর আমি কিছু বলতে চাচ্ছি না।
অভিযোগ তোলার বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গিয়াস বলেন, মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) অভিযোগটি শিক্ষক তুলে নিয়ে গেছেন। এতে কোনো প্রকার চাপ বা হুমকি-ধামকির বিষয় ছিলো না। শিক্ষক এবং আওয়ামী লীগ নেতা দু’জনই একই দলের অনুসারী। বিষয়টি স্থানীয় নেতাকর্মীরা ও ম্যানেজিং কমিটির লোকজন স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে দিয়েছেন।
ওসি বলেন, বিষয়টি আসলে অনেক বড় বিষয় নয়, সামাজিক কিছু বিষয় থাকে একজন শিক্ষক আরেকজন মানুষকে এমন শব্দ ব্যবহার বা এমন আচরণ করতে পারেনা যাতে সেও ছোট হয়। শিক্ষকের সঙ্গে যে আওয়ামী লীগ নেতার ঝামেলা হয়েছে তিনি ইতিমধ্যে ক্ষমাও চেয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, স্বাধীনতা দিবসে ইউনিয়ন যুবলীগ এমএম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে স্কুলের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নেয়। যেখানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহজাহান খানও অতিথি ছিলেন এবং দাওয়াতের বিষয়টিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ থাকায় এ অনুমতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ওপর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হুমায়ুন কবির ক্ষিপ্ত হন।
এর জের ধরে স্বাধীনতা দিবসের দিন (রোববার) দুপুরে হুমায়ুন কবির স্কুলের প্রধান শিক্ষককে প্রথমে লাঞ্ছিত ও পরে মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে যার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ভূক্তভোগী প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক আকন।
এ ঘটনা শিক্ষার্থীরা জানতে পেরে পরের দিন ২৭ মার্চ সোমবার বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। পরে শিক্ষকের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের ওই নেতাকে থানায় আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
তবে এ বিষয়ে সাতুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, আসলে বিষয়টি তেমন কিছু নয়, রাজাপুর থানায় বসে স্থানীয় চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৬
এমএস/বিএস