ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘প্রধানমন্ত্রী সাপোর্ট না করলে পদ্মায় ভেসে যেতাম’

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৭
‘প্রধানমন্ত্রী সাপোর্ট না করলে পদ্মায় ভেসে যেতাম’ ড. মসিউর রহমান। ছবি- জিএম মুজিবুর

[ড. মসিউর রহমান। ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সময়ের ব্যক্তিগত সহকারী। বিভিন্ন সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা, এনবিআর, পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইআরডিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় দায়িত্ব পালন করেছেন। এ-মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুকন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে এই অর্থনীতিবিদ রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সে ভূমিকা আগামীকে আরো বাড়তে পারে।

সম্প্রতি রাজধানীর রমনায় মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবন ‘উত্তরায়ণ’-এ বাংলানিউজকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন তিনি। তার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এ লেখাটি লিখেছেন বাংলানিউজের ডেপুটি চিফ অব করেসপন্ডেন্টস মফিজুল সাদিক]

ঢাকা: পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয় ড. মসিউর রহমানের বিরুদ্ধে। নানা মহল থেকে নানা নেতিবাচক মন্তব্য শুনতে হয় তাকে।

ওই সময় তিনি বলেছিলেন, পদ্মাসেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি।   কানাডার আদালতেও প্রমাণিত হয়েছে, পদ্মাসেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি।

ড. মসিউর রহমান সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘অনেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে সাপোর্ট না করতেন, তবে পদ্মার পানিতে ভেসে যেতাম’।
 
তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মাসেতুর দুর্নীতি ও রমেশ শাহের ডায়েরি নিয়ে যা লেখা হয়েছিলো, তার কোনো ভিত্তি নেই। সবই ছিলো ষড়যন্ত্র ও গালগল্প’।
 
‘বিশেষ গোষ্ঠী ও বিশেষ ব্যক্তি এটি নিয়ে ধোঁয়া তুলেছেন। আমাদের দেশি যারা তা করেছেন, তারা তো দেশের প্রতি অবশ্যই অন্যায় করেছেন। যারা সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা যদি এ ধোঁয়া তোলার সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাদের অপরাধটা আরও বড়’।
ড. মসিউর রহমান।  ছবি- জিএম মুজিবুর
ড. মসিউর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখেছেন যে, আসলে এর ভেতরে কিছু নেই। । পদ্মাসেতুর কথিত দুর্নীতির কোনো ভিত্তি নেই, প্রধানমন্ত্রী তার দূরদৃষ্টি দিয়েই বুঝতে পেরেছেন’।
 
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সব সময় ভালো। তারা কখনও উন্নয়ন সহায়তা কমায়নি, বরং আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পদ্মাসেতুতে প্রতিশ্রুত ঋণ দিতে পারবে না, এটি আগেও বিশ্বব্যাংক বলেছে’।
 
প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অবকাঠামোর ইতিবাচক পরিবর্তনসহ অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যেই দশটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। পদ্মা বহুমুখী সেতু, পদ্মায় রেলসেতু, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট (এমআরটি), পায়রা বন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার, মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (প্রথম পর্যায়) এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে’।
 
এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও গুরুত্ব দিতে চাই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও দক্ষতা দরকার, প্রশাসনিক দক্ষতা দরকার, বিদেশি বিনিয়োগও দরকার। সেসব দিকেও নজর দিচ্ছে সরকার’।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কিছু ছবি
ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘বিশ্বের আর্থিক মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারলেও ইউরোপ পিছিয়ে। ইউরোপে মন্দা কাটিয়ে ওঠার গতি অনেক স্লো। এর নেতিবাচক প্রভাব আমাদের রয়েছে। তারপরও সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’।
 
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারত সরকার বাংলাদেশকে এলওসি’র (নমনীয় ঋণ) আওতায় মোট পাঁচ বিলিয়ন ডলার দেবে। ইতোমধ্যেই প্রথম ও দ্বিতীয় এলওসি’র আওতায় মোট তিন বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। শিগগিরই বাকি দুই বিলিয়ন ডলারও পাওয়া যাবে’।
 
‘অনেকেই না জেনে ভারতের ঋণ নিয়ে অহেতুক সমালোচনা করে। তাদের জানা উচিৎ, ভারত আগেই ঋণ দিয়ে দেয়, পরে প্রকল্প নির্বাচিত হয়। এমওইউ-তে (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্টেন্ডিংস বা সমঝোতা স্মারক) কিছু প্রকল্পের নাম থাকলেও এটি চূড়ান্ত হয় ঋণ পাওয়ার পরে। কিন্তু অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের ক্ষেত্রে আগে প্রকল্প নির্বাচন করতে হয়, পরে ঋণ দেয়’।
 
‘তাই ভারতীয় ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়ন সময়াসাপেক্ষ। এতে সমালোচনার কিছু নেই’- যোগ করেন তিনি।

ইআরডি ও এনবিআর থেকে শুরু করে সকল সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দাপুটে বিচরণ ছিলো ড. মসিউর রহমানের।
ড. মসিউর রহমান।  ছবি- জিএম মুজিবুর
তিনি বলেন, ‘সরকারের যে বিভাগ ও মন্ত্রণালয়েই গেছি, দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছি, কিছু না কিছু অর্জনের চেষ্টা করেছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ে থাকাকালে বাজেট তৈরি ও আর্থিক বিষয়টি বুঝে নিয়েছি। বিবিএসে (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) গিয়ে কম্পিউটারে দক্ষতা অর্জন করি, বাংলা টাইপ করা শিখেছি। কিভাবে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) ও মূল্যস্ফীতি নির্ণয় করতে হয়, সে বিষয়েও দক্ষতা অর্জন করি’।

‘১৯৯২ সালে এনবিআরের চেয়ারম্যান ছিলাম। সাইফুর রহমান যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন ডিমে দুই ধরনের ট্যাক্স নির্ধারণ করা হলো। যেসব ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো হবে, সেগুলোকে ট্যাক্সমুক্ত করা হলো। কিন্তু যেসব ডিম খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে, সেগুলোতে ৪৫ শতাংশ ট্যাক্স নির্ধারণ করা হলো। এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে এ হাস্যকর পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছিলাম। ডিমে গড়ে ৭ শতাংশ ট্যাক্স আরোপের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলাম। কিছুদিন পরে আমার কথাই রেখেছিলেন সাইফুর রহমান’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।