সুন্দরবনের এই অঞ্চলে মাছ ধরে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে স্থানীয় জেলেরা। তবে মাছ ধরতে গিয়েই নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাদের।
আর এ কাজের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ভাসমান দু’টি বিওপি স্থাপন করেছে বিজিবি। এর মাধ্যমে বিজিবি সুন্দরবনের ৩৮ কিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকা নজরদারির মধ্যে এনেছে। এর মধ্যে ২০১৩ সালে প্রথম বিওবি স্থাপন করা হয়েছে সুন্দরবনের গহীনে কাঁচিকাটা খালে। আর দ্বিতীয় বিওপি স্থাপন করা হয়েছে সুন্দরবনের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের আঠারোবেকী খালে।
এ বিষয়ে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আঠারোবেকী খাল এলাকায় জেলেরা মাছ ধরে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু জলদস্যুরা এসে তাদের মাছ, টাকা ও চাল-ডালসহ অন্যান্য রসদ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ভাসমান দু’টি বিওপি স্থাপনের ফলে দরিদ্র জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ৬০ কিলোমিটার অরক্ষিত এলাকা সুরক্ষার্থে আরো দু’টি ভাসমান বিওপি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে স্থাপিত দু’টি বিওপির মাধ্যমে অরক্ষিত ৩৮ কিলোমিটার এলাকা বিজিবি’র নজরদারিতে থাকবে। ভাসমান বিওপি’র মাধ্যমে বিজিবি সদস্যরা নজরদারি করলে এই অঞ্চলের সব চোরাচালান বন্ধ করাও সম্ভব হবে- যোগ করেন বিজিবি’র মহাপরিচালক।
সাতক্ষীরার নীলডুমুর অঞ্চলের স্থানীয়রা জানান, সুন্দরবন অঞ্চলের খোলপেটুয়া ও রায়মঙ্গল নদীতে ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে যায় জেলেরা। এছাড়া কাঁকড়া ধরতে এবং মধু ও গোলপাতা সংগ্রহ করতে বনের সরু গলিতে যেতে হয়। ওই সময় সংঘবদ্ধ দস্যুরা তাদের ওপর আক্রমণ করে সর্বস্ব লুটে নেয়। অনেক সময় নিরীহ জেলেদের অপহরণ করে। গহীন বনে আটকে রেখে দাবি করে মোটা অংকের মুক্তিপণ। যতদিন এ মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ না করা হয় ততদিন জেলেদের ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন।
তবে এ অঞ্চলে বিজিবি’র তৎপরতার কারণে এসব দস্যুদের আনাগোনা কমে গেছে বলেও জানায় স্থানীয়রা। বিজিবি’র খুলনা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সাতক্ষীরার এ অঞ্চলে আগে জেলেদের অপহরণের ঘটনা ঘটতো। সুন্দরবনের সরু খালের গহীনেও অনেক জলদস্যু থাকতো। তবে এখন নেই।
নিরীহ এসব জেলেদের বাঁচাতে ও সুন্দরবনের সুরক্ষায় নীলডুমুর কাঁচিকাটা খালে ২০১৩ সালে বিজিবি’র পক্ষ থেকে একটি ভাসমান বিওপি স্থাপন করা হয়। সেখানে বিজিবি সদস্যদের নিয়মিত পেট্রোলিং ও নজরদারির কারণে এ জলদস্যুদের আনা-গোণা নেই। বর্তমানে সুন্দরবনের আঠারোবেকী খালে একটি বিওপি স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে জেলেরা নির্ভয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে।
বিজিবি সূত্র জানায়, আঠারোবেকী খালে স্থাপনকৃত বিজিবি’র দ্বিতীয় বর্ডার অবজারভেশন পোস্টের (বিওপি) দু’জন অফিসারের নেতৃত্বে ৩৫ জন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এতে রায়মঙ্গল নদী ও আঠারোবেকী খাল দিয়ে নারী ও শিশু পাচার, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালান প্রতিরোধ, অবৈধভাবে বিদেশি জাহাজ চলাচলসহ সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে নজরদারি করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৭
এসজেএ/এসআই