ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মেট্রোরেল নির্মাণের ভোগান্তি নিরসনে প্রশস্ত হবে সড়ক

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪১ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৭
মেট্রোরেল নির্মাণের ভোগান্তি নিরসনে প্রশস্ত হবে সড়ক মেট্রোরেল

ঢাকা: ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট (ডিএমআরটিডি) বা মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ বিদ্যমান ইউটিলিটি স্থানান্তর ও ইউটিলিটি স্থাপনকালে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা। কিন্তু এসব কাজ ঠিকঠাক মতো না হওয়ায় ভোগান্তির অন্ত নেই সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিবাসীদের।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মূল সড়ক কেটে ছিঁড়ে প্রায় মাস খানেক আগে ইউটিলিটি স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু এখনও আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি সড়কটি।

কোথাও গর্ত, কোথাও এবড়োথেবড়ো কোথাও আবার মাটির স্তূপ জমে আছে।

কাটা-ছেঁড়া, এবড়োখেবড়ো এসব সড়ক দিয়েই প্রতিদিন ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রীদের। যানবাহন চলাচলের ফলে বাতাসে সব সময়ই ধুলাবালু লেগেই আছে। ইউটিলিটি স্থানান্তর করা হলেও আগের মতো পিটুমিন দিয়ে ঢালাই দেওয়া হয়নি সড়কে।

পল্লবী এলাকাতেও সড়কের একই বেহালদশা। সড়কে কাটা-ছেঁড়ার ফলে একটি বাসই চলাচল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। খোঁড়াখুঁড়ির ফলে সড়কের মাত্র ৫০ শতাংশ যানচলাচলে ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে তালতলা থেকে মিরপুর ১২ নম্বর পর্যন্ত সড়কে জনগণের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই।
 
মেট্রোরেল নির্মাণকালে ভোগান্তি থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে সংশ্লিষ্ট সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
 
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের নির্মাণ কাজের সময় এলাইনমেন্ট বরাবর ১১ মিটার জায়গা প্রশস্ত করার সিদ্ধান্ত আগে থেকেই ছিলো। এই সিদ্ধান্ত প্রয়োজন মোতাবেক বাস্তবায়ন করা হবে। দরকার পড়লে সড়কের পাশের ভবনসমূহ ভাঙন ও পুনঃনির্মাণ করা হবে।

প্রাথমিকভাবে উত্তরা, পল্লবী, রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে খামারবাড়ি হয়ে হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, শাহবাগ-টিএসসি, দোয়েল চত্বর, তোপখানা রোড হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক পযর্ন্ত ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার মেট্রোরেল রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজন অনুসারে এ রুটটি প্রশস্ত করা হবে যাতে করে ভোগান্তি নিরসন হয়। সহজেই যানবাহন চলাচল ও পথচারীদের চলার পথও মসৃণ হয়।
 
এ পদক্ষেপ প্রাথমিকভাবে মিরপুর ডিওএইচএস গেট থেকে মিরপুর-১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়ক প্রশস্ত ও উন্নয়ন করা হবে। ১১৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক প্রশস্ত করা হবে। মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ কাজের সময় দক্ষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দেওয়ার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পথচারীদের ফুটপাত ব্যবহারের সুবিধাসহ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও উন্নত করা হবে। এমআরটি লাইন-৬ এর ভায়াডাক্ট এর প্রি কাস্ট গার্ডার পরিবহনের জন্য এই রাস্তাটিই একমাত্র পথ। সড়কের ইউটিলিটি স্থানান্তরসহ ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। পেভমেন্ট, সীমানা প্রাচীর, আরসিসি পাইপ ড্রেন, সসারড্রেইন ও ল্যান্ডস্কেপিংও করা হবে। রাস্তার দুই পাশে ১ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত ফুটপাত, ২ দশমিক ৭ মিটার প্রশস্ত সবুজ মিডিয়ানও থাকবে।
 
মেট্রোরেল প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক মাহবুবুল আলম জানান, মিরপুর ডিওএইচএস গেট থেকে মিরপুর-১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন করা হবে। যাতে করে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় এই সড়কে কোনো জটলা তৈরি না হয়। কারণ সড়কটি অনেক সরু। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বোঝাপাড়া হয়ে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই শুরু হবে সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ। মেট্রোরেলের ১৬টি স্টেশন হবে- উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, আইএমটি (মিরপুর-১১), মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায়।

মাহবুবুল আলম বলেন, এসব এলাকায় স্টেশন নির্মাণ করতেও আমাদের প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এটা প্রকল্পের আওতায় করবো। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথজুড়ে থাকবে মেট্রোরেল। এই পথে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সড়ক প্রশস্ত করার দরকার পড়লে সিটি কর্পোরেশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

ওই এক কিলোমিটার রাস্তাটি প্রশস্ত করা না হলে নির্মাণ কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার পাশাপাশি বসবাসকারী জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীদের চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটাবে। বিদ্যমান রাস্তাটি ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে (এনডিসি), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ সড়ক।

এছাড়াও সড়কটি মিরপুর ডিওএইসএস, মিরপুর-১২, কালশী মোড়ের মধ্যেও একমাত্র সংযোগ সড়ক হওয়া এর গুরুত্ব অনেক বেশি। সড়কটিতে মেট্রোরেলের স্টেশন থাকবে বলে ভবিষ্যতে এ সড়কে ট্রাফিক চাহিদা অধিক হারে বৃদ্ধি পাবে। এসব বিষয় চিন্তা করেই প্রাথমিক পর্যায়ে সড়কটি প্রশস্ত করা হচ্ছে।     
 
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পল্লবীতে পরিকল্পিত এমআরটি স্টেশনের অবস্থান হওয়ায় সড়কটিতে ট্রাফিক চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। সড়কটির চারপাশের পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার উন্নয়নের ফলে সড়কটির ট্রাফিক চাহিদা বিবেচনায় রেখে সর্ব প্রথম ওই সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৭
এমআইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।