ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

জাবি মেডিক্যালে ওষুধ মানেই নাপা-হিস্টাসিন

নুর আলম হিমেল, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৭
জাবি মেডিক্যালে ওষুধ মানেই নাপা-হিস্টাসিন জাবি মেডিক্যাল সেন্টার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মেডিক্যালে সেন্টারে যে কোন রোগের চিকিৎসা নিতে গেলে শিক্ষার্থীদের হাতে নাপা আর হিস্টাসিন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বাংলানিউজকে অভিযোগ করে বলেন, এখানে যেকোন রোগের ওষুধ হিসেবে নাপা ও হিসটাসিন দেওয়া হয়। আর একটু গুরুতর হলে সাভারের এনাম মেডিক্যালে পাঠিয়ে দেন ডাক্তাররা।

তাহলে বিশ^বিদ্যালয়ে মেডিক্যাল সেন্টারের কি প্রয়োজন। এত টাকা খরচ করে মেডিক্যাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে লাভ কি? যদি শিক্ষার্থীরা সঠিক চিকিৎসা আর ওষুধ না পায়।

ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান আহম্মেদ বলেন, এমনিতেই বিশ^বিদ্যালয় মেডিক্যালে ঔষধ সরবরাহ কম। তার পরও নিম্নমানের কোম্পানির নিম্নমানের ঔষধ ক্রয় করা হয়। যা খেয়ে আমাদের রোগ তো ভালই হয় না উল্টো এইসব ওষুধ খেয়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

মেডিক্যাল সূত্রে জানা যায়, এ বছরের জন্য ওষুধ ক্রয় বাবদ সাড়ে ১৭ লাখ টাকার বাজেট করা হয়েছে। প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর সাড়ে তিন থেকে ৪ লাখ টাকার ওষুধ ক্রয় করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উপ-মেডিক্যাল অফিসার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যালে ওষুধ ক্রয়ের জন্য একটি কমিটি থাকে। তারা বিভিন্ন কোম্পানির নাম মিটিংয়ে উত্থাপন করেন। এসব নাম পাশ করিয়ে সেই ওষুধগুলো ক্রয় করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ওষুধ ক্রয় করা হয়ে থাকে।

কমিটিতে হল প্রাধ্যক্ষ, শিক্ষক সমিতির নেতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি ও রসায়ণ বিভাগের শিক্ষক এবং মেডিক্যালের দুই জন উপ- মেডিক্যাল অফিসারসহ অন্যান্যরা থাকেন।

তিনি আরো বলেন, আমি তাজ্জব হয়ে যায়, এ কমিটির সদস্যরা যখন নিম্নমানের ওষুধ কোম্পানির নামগুলো উত্থাপন করে তা বাস্তবায়ন করিয়ে নেন। আমাদের কথা তারা কোন আমলেই নেন না। আমরা এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক। কিন্তু এমনও ঘটনা ঘটেছে যে আমাদের মেডিক্যালে হামদর্দের ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। হামদর্দের ঔষধ আমাদের এখানে কোন প্রয়োজন নেই তা জানালেও তারা বলে, ‘আরে না প্রয়োজন আছে। লিস্টে নাম ওঠাও। ’

বাজারের সব থেকে নিম্নমানের যে ওষুধগুলো আছে তার সবগুলোর নাম আমাদের লিস্টে আছে। কারণ এই সব কোম্পানির লোকজন ওষুধ ক্রয় কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নানা প্রকার সুবিধা দিয়ে তাদের দিয়ে তাদের কোম্পানির নাম লিস্টে উঠিয়ে নেন।

আবার বেশি দামের ওষুধ সরবরাহ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে মেডিক্যাল অফিসারের মনে। তারা জানান, বেশি দামের ওষুধ সরবরাহ করলে রমরমা বাণিজ্য শুরু হয়ে যায়। কিভাবে হয় জানতে চাইলে তারা জানান, একটু দামি এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ যদি আমরা এখানে রাখি। তাহলে দেখা যায় রোগ না থাকা সত্ত্বেও অনেকে এসে এই ওষুধগুলো নিয়ে যায়। যেহেতু এটি ডোজের ওষুধ। কমপক্ষে তাদেরকে পাঁচটি ট্যাবলেট দেওয়া লাগে যার প্রতিটি ট্যাবলেটের মূল্য কমপক্ষে ৩৫ টাকা। এখান থেকে ওষুধ নিয়ে গিয়ে তারা বাইরের ফার্মেসিতে বিক্রি করে দেন।

অপরদিকে উপ-মেডিক্যাল অফিসার ডা. শামছুর রহমান বলেন, আমাদের বাজেট খুবই কম যা দিয়ে দামি ওষুধ ক্রয় করা সম্ভব নয়। তার পরেও চেষ্টা করি কম হলেও সব আইটেমের ওষুধ রাখার জন্য।

এ বিষয়ে একাধিক বার বিশ^বিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ও বিশ^বিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও মিটিংয়ের অজুহাত দিয়ে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৭
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।