দুটি নামই তাদের সাংগাঠনিক নাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনি তাদের জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেলেও তাদের নাগাল পায়নি।
১৫ মার্চ মিরসরাই থেকে আটক করা দুই জঙ্গির কাছ থেকে আধপোড়া একটি মোবাইল ফোনসেট পাওয়া যায়। পরে ওই মোবাইল সেট পুলিশের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যে আরো কয়েকজন জঙ্গির সন্ধান পাওয়া যায়। পরে আটক জঙ্গিদের কাছ থেকে আনাস ও রনির ঠিকানা খুঁজে পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনি।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শফিকুল ইসলাম ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’ শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যায় প্রেসব্রিফিং করেন।
বাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর তারা প্রথমে চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকায় অবস্থান করেছিল। পরে মিররসরাই এলাকায় আসে। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় মিরসরাইতে বাড়ি ভাড়া নিতে পারেনি। পরে তাদেরকে কুমিল্লার কোটবাড়িতে বিশ্বরোডের আশেপাশে কোথাও মেস ভাড়া নিতে বলা হয়। এরপর রনি ও আনাস কুমিল্লায় আসে। তারা ১ মার্চ থেকে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ির গন্ধমতি এলাকায় দেলোয়ার হোসেনের তিনতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস শুরু করে। রনি আগে জেএমবির সদস্য ছিল। এখন নব্য জেএমবির। ২৯ মার্চ বিকেলে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এসে পৌঁছার আগেই তারা ওই বাসা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনিকে জানান, তারা দিনের বেলায় সবসময় ঘরের দরজা খোলা রাখত। ২৯ তারিখ সকাল ১০ টায় দেলোয়ার হোসেন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তাদের একজনকে কক্ষে ঘুমানো অবস্থায় দেখে গেছে।
২৯ মার্চ আস্তানা শনাক্ত হওয়ার পর বিকেল ৪টায় জঙ্গি দুজনের (স) কক্ষে পুলিশ তালা ঝুলিয়ে দেয়। ওই দিন সন্ধ্যা পৌণে ৭ টায় মালিকের ছোট ভাই সাদ্দাম হোসেনকে (৩০) সন্দেহজনকভাবে আটক করা হয়। এরপর সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় এবং নির্বাচনের কারণে ওই দিন ও পরের দিন ৩০ মার্চ অভিযান বন্ধ রাখা হয়। তবে বাড়িটি ঘিরে রাখে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’ শুরু হয়।
অভিযান শুরুর আগে ওই আস্তানার আশেপাশের প্রায় ২ বর্গ কি.মি. এলাকাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুপালী মন্ডলের নির্দেশে মাইকিং করে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের বিষয়ে স্থানীয়দের সতর্ক করা হয় । এ অভিযানে সোয়াট টিমের দায়িত্ব পালন করেন এডিসি সাইম ও এডিসি আনোয়ার। অভিযানের শুরুতে প্রথমে টিয়ারশেল ছোড়া হয়। পরে ভবনের তৃতীয় ও পরে দ্বিতীয় তলায় অনুসন্ধান চালানো হয়। এরপর নিচ তলার একটি কক্ষে দু’টো ট্রলিতে ৫ কেজি করে দুটি বোমা, আলাদা একটা ব্যাগে ৪টি গ্রেনেড ও ২টি সুইসাইড ভেস্ট পাওয়া যায়।
অভিযান বিকেল সোয়া ৪টার দিকে শেষ হয়। অভিযানকালে ওই আস্তানা লক্ষ্য করে শতাধিক রাউন্ড টিয়ার শেল ও বুলেট ছুড়েছে কাউন্টার টেররিজম, সোয়াট ও র্যাব-পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৭
জেএম