ওষুধ প্রশাসনের তদারকি না থাকার সুযোগে এ কোম্পানি গোপনে খুচরা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিচ্ছে জনস্বাস্থ্যে ক্ষতিকর এ ওষুধ।
মূলত এ কোম্পানির নিষিদ্ধ এ অ্যান্টিবায়োটিকের বিষয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই খুচরা বিক্রেতাদেরও কোনো ধারণা না থাকায় তাদের অবৈধ কারবার বন্ধ হচ্ছে না।
উল্টো সংশ্লিষ্ট ওষুধ কোম্পানির ময়মনসিংহের জোনাল সেলস ম্যানেজার (জেডএসএম) মোশতাক এ তালুকদার নিজেদের সাইনবোর্ডবিহীন সেলস অফিসে নিষিদ্ধ এ অ্যান্টিবায়োটিক মজুদ করেছেন।
এ ডিপো থেকেই প্রতিদিন নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার ফার্মেসিতে বাজারজাত করা হচ্ছে এ ওষুধ।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে নগরীর সেহড়া এলাকার ডা: এল হারুন হেলথ কমপ্লেক্সে’র এ কোম্পানির ডিপোসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে মিলেছে এসব তথ্য।
জানা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুসরণ করে উৎপাদন না করায় চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্লোবেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড নামে ওষুধ কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক (পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন) উৎপাদন ও বিপণন বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
একই দিনে একই রকম নির্দেশনা প্রদান করা হয় আরো ২৭ কোম্পানিকে।
কিন্তু এ নির্দেশনা সত্ত্বেও ময়মনসিংহে কৌশলে রমরমা ব্যবসা করে চলেছে ওই ওষুধ কোম্পানির লোকজন। তারা বাজার থেকে এমনকি নিজেদের ডিপো থেকেও এ নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক তুলে না নিয়ে বাজারে ছাড়ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রের বাইরেও ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলার ফার্মেসিতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এ নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির লোকজনই মানহীন এ ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
এ ক্ষেত্রে তারা খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের অজ্ঞতার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন।
সরেজমিনে এ কোম্পানির ডিপোতে গিয়ে দেখা গেছে, ওই কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায় কোম্পানির সেলস অফিস থাকলেও বাইরে নেই কোনো সাইনবোর্ড। তবে অফিসের প্রবেশের দরজায় সাঁটানো ওষুধ কোম্পানির বিভিন্ন স্টিকার।
দরজায় কড়া নাড়তেই সাড়া দিলেন এক কর্মচারী। তার সঙ্গে আলাপকালেই পাশের কক্ষে বেশ ব্যস্তই মনে হলো এ কোম্পানির জোনাল সেলস ম্যানেজার (জেডএসএম) মোশতাক এ তালুকদারকে।
তিনি এ কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক নিষিদ্ধের বিষয়টি স্বীকার করেন। একই সঙ্গে এ অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো মজুদ তাদের কাছে নেই বলেও দাবি করেন।
কিন্তু তাকে চ্যালেঞ্জের পর তালাবদ্ধ স্টোর রুমে প্রবেশ করে দেখা যায় কার্টনের পর কার্টন নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক (পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন)।
কার্টনের গায়ে লেখা ‘নট ফর সেলস’। একটি কার্টনে দেখা মিলে ফেনসিডিলও। তবে এ বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
মোশতাক এ তালুকদার এসব অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির জন্য না হলে নিষেধাজ্ঞার পরেও কেনো ওষুধের মজুদ রেখেছেন এমন প্রশ্ন করতেই আমতা আমতা করে বলেন, আসলে এগুলো আমরা বিক্রি করছি না। প্রয়োজনে এগুলো ধ্বংস করা হবে।
সূত্র জানায়, গোপনে বাজারে এ নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করতেই কৌশল হিসেবে কার্টনের গায়ে ‘নট ফর সেলস’ লেখা রয়েছে। মূলত সন্দেহ এড়াতেই এমন পন্থা অবলম্বন করছেন কোম্পানির লোকজন।
ক্রেতা ও বিক্রেতারা এ অ্যান্টিবায়োটিক নিষিদ্ধের খবর সম্পর্কে ধারণা না থাকার সুযোগ পুরোমাত্রায় কাজে লাগাচ্ছেন তারা।
সম্প্রতি ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামে বদলি হওয়া জেলা ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক গুলশান জাহানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে বলেন, কার্টনের গায়ে নট ফর সেলস লেখাটা তাদের এক রকমের কৌশল হতে পারে।
তবে কোনো কোম্পানির ওষুধ নিষিদ্ধ করা হলে ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদও বেআইনী। মজুদকারীদের উচিত হবে নিষিদ্ধ ওষুধ ধ্বংস করা, যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলার বর্তমান ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক সাখাওয়াত হোসেন রাজু বাংলানিউজকে বলেন, আমি নতুন এসেছি। তবে অবশ্যই খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৭
এমএএএম/বিএস