ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ মাঘ ১৪৩১, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছি মা, আমার জন্য দোয়া করো’

রীনা আকতার তুলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৭
‘গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছি মা, আমার জন্য দোয়া করো’ স্বজনদের উপস্থিতিতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদকে বনানী কবরস্থানে চিরশায়িত করা হয়। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকেই মাকে বলেন, ‘মা তুমি কেমন আছো? চোখের ডাক্তার দেখাবে না, চোখের সমস্যা তো বেড়েই চলেছে, আমি তো সময় পাচ্ছি না। তোমায় ডাক্তার দেখাতে হবে।’ মা বলেন, ‘বাবা আমি ভালো আছি, এতো রাত করে এলি যে বাবা।’ আবার তিনি মাকে বলেন, ‘জরুরি কাজে এসেছি মা, আজই সিলেট চলে যাবো গুরুত্বপূর্ণ কাজে, আমার জন্য দোয়া করো।’

সিলেটে গেলেন গুরুত্বপূর্ণ কাজ জঙ্গিবিরোধী অভিযানে। কিন্তু আর ফিরতে পারলেন না।

পারলেন না মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে। পারলেন না তার চোখের চিকিৎসা করাতে। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ সিলেটের ‘আতিয়া মহলে’ অভিযানকালে জঙ্গিদের বোমার আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে ক’দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর ৩০ মার্চ চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

ছেলেকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে চিরসমাহিত করতে এসে এ কথাগুলোই বিলাপ করতে করতে বলছিলেন তার মা সায়েদা করিম। ২৫ মার্চ বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হওয়ার আগে ২২ মার্চ আজাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল মা সায়েদার।

বিলাপ করতে করতে সায়েদা করিম বলেন, ‘আমার চোখের চিকিৎসার জন্য অনুরাধ জানিয়ে আজাদ বলেছিল, ‘মা সময় পাচ্ছি না, তুমি চোখের চিকিৎসা করিয়ে নিও’। ’
 
আজাদকে শেষ বিদায়কালে বনানী কবরস্থানে মায়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী সুমাইয়া সুলতানা শর্মী, তিন সন্তান জারিফ, জাবির ও জারা। তাদের আহাজারিতে বনানী কবরস্থানের আকাশ-বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠছিল।
 
সায়েদা করিম বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, তার ছেলে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেও বলছিল, ‍আবার সময় হচ্ছে না বলে চিকিৎসা করে নিয়েও বলেছিল। বাসা থেকে সবশেষ সিলেটের উদ্দেশে যাওয়ার সময় বলেছিল, ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি মা, আমার জন্য দোয়া করো’।
 
সায়েদা করিম উপস্থিত সবার কাছে ছেলের জন্য দোয়া চান। বলেন, ‘যাকে হারিয়েছি তাকে তো আর ফিরে পাবো না। আপনারা আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে জান্নাতবাসী করে। ’ বলতে বলতে আবার যেন কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি।
 
শোকে পাথরের মতো হয়ে যাওয়া আজাদের স্ত্রী সুমাইয়া সুলতানা বলেন, ‘এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে কোনোদিন ভাবিনি। আপনার‍া সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন। ’
 
বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে আসা জাবির ও জারা বুঝে উঠতে পারছিলো না কী করবে। নির্বাক দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকিয়ে থাকছিলো। তবে কখনো হাউমাউ করে, কখনো চেপে চেপে কেঁদে চলছিল জারিফ।
 
সিলেটের শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় গত ২৫ মার্চ বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন আবুল কালাম আজাদ। তৎক্ষণাৎ তাকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাতেই তার মাথায় বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচার হয়।  
 
এরপর হেলিকপ্টারেযোগে আজাদকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে আসা হয়। পরে অবস্থার উন্নতি না হলে গত ২৬ মার্চ (রোববার) তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।  
 
২৯ মার্চ আবুল কালাম আজাদকে লাইফ সাপোর্টে রাখা অবস্থায়ই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশে ফেরত আনা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দিনগত রাত ১২টা ৫ মিনিটের দিকে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কর্নেল আজাদের মৃত্যু হয়। ৩১ মার্চ তাকে স্বজন-সহকর্মী-শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিতিতে বনানী কবরস্থানে চিরসমাহিত করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৭ 
আরএটি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।