জানাজার নামাজ পড়ান মহানগরীর হেতমখাঁ গোরস্থান মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মোহাম্মদ বেলাল হোসেন। রাওদার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ ও ভাই হাসান আতিফসহ ইসালামী মেডিকেল কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানাজার নামাজে অংশ নেন।
এছাড়া দাফনের জন্য রাওদা আতিফের মরদেহ হেতমখাঁ গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হলে মা আমিনাথ মুহারমিমাথের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আইশাদ শান সাকির ও কমনওয়েলথের সেকেন্ড সেক্রেটারি ইসমাইল মুফিদসহ তার কলেজের সহপাঠী ও পুলিশ বিভাগের স্থানীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হন।
এ সময় পরিবার ও কলেজের সহপাঠীরা রাওদা অতিফকে শেষ বিদায় জানান।
এর মধ্যে দিয়ে অনেক সিদ্ধান্তহীনতার পর শেষ পর্যন্ত রাজশাহীতেই দাফন করা হয় মালদ্বীপের মেয়ে রাওদা আতিফের মরদেহ। তিনদিন থেকে নানান চিন্তা-ভাবনার পর মালদ্বীপে মরদেহ না নিয়ে এখানেই দাফনের অনুমতি দেয় তার পরিবার।
পরে এই ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রক্রিয়াও শেষ করা হয়। বাদ জোহর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে রাজশাহীর হেতমখাঁ গোরস্থানে দাফন হয় তার মরদেহ। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার (সদর) ইফতে খায়ের আলম বাংলানিউজকে জানান, রাওদার মরদেহ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। দুপুরে তার বাবা-মাসহ অন্যরা রাজশাহী মোটেলে অবস্থান করলেও বিকেলের মধ্যে তাদের রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। পরিবারের সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক কথা-বার্তাও শেষ হয়েছে।
এখন তারা রাওদার ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকবেন। সেখান থেকে যদি আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোনো আলামত পাওয়া যায় তাহলেই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। আপাতত এ ঘটনায় শাহ মখদুম থানায় করা অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলাটিই শেষ আইনি প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করেন মহানগর পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের রাজশাহী অর্গানিয়ার এনায়েত কবীর মিলন বাংলানিউজকে জানান, রাওদার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ জানিয়েছেন, তারা মালদ্বীপের নাগরিক হওয়ায় এথানে দাফন কাজ সম্পন্নের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় জনবল নেই। এই কারণে তারা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা নিয়েছেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘর থেকে রাওদার মরদেহ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয় ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদকন্যা মেডিকেল ছাত্রী রাওদা আতিফের। তবে রাজশাহী থেকে মালদ্বীপে নিয়ে যাওয়া নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রাতে তার মরদেহ আবারও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়।
রাওদার মরদেহের ময়নাতদন্তের পর তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে শনিবারও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি রামেক ফরেনসিক বিভাগ।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ময়নাতদন্তে থাকা একজন চিকিৎসক জানান, আপাতত আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোনো আলামত পাননি তারা। এর পরও মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে রাওদার মরদেহ থেকে ভিসেরা সংরক্ষণ করেছেন।
এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ভিসেরা রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা যাবে। তখন সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিবেদনও দেওয়া হবে।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) দুপুরে রাওদার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডা. মনসুর রহমানকে প্রধান করে টিম গঠন করা হয়। টিমে অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এনামুল হক ও ডা. এমদাদুর রহমান।
ময়নাতদন্তের আগে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে মেয়ের মরদেহ দেখতে যান তারা বাবা-মা। সেখানে মেয়ে রাওদার মরদেহে দেখার পর রাওদার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ পুলিশকে ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সময় মৃত্যুর সঠিক কারণ অনুসন্ধানেরও দাবি করেন তিনি।
রাওদার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ, মা আমিনাথ মুহারমিমাথের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আইশাদ শান সাকির ও কমনওয়েলথের সেকেন্ড সেক্রেটারি ইসমাইল মুফিদও ছিলেন।
এরই মধ্যে রাওদার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ রিয়াদ জানান, তিন কার্য দিবসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
গত বুধবার (২৯ মার্চ) রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় রাওদার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়।
এই মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১৩তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন রাওদা। বিদেশি কোটায় ভর্তির পর গত বছরের ১৪ জানুয়ারি মহিলা হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার ওই কক্ষে ওঠেছিলেন রাওদা। ওই ব্লকে আরও ১৪ জন বিদেশি ছাত্রী থাকেন।
এক সময় প্রখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের মডেল হয়েছিলেন শখের বসে। শিক্ষার টানে মালদ্বীপ থেকে বাংলাদেশে এসে ভর্তি হয়েছিলেন এই মেডিকেল কলেজে। এরপর লাশ হলেন সদ্য টিন অতিক্রান্ত এই মালদ্বীপীয় মেয়েটি। এখানে লেখাপড়ার পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে সার্টিফিকেট কোর্সও করছিলেন রাওদা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৭
এসএস/জেডএম